spot_img

বগুড়ার বাঁধাকপি এখন মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে

অবশ্যই পরুন

সবজির রাজধানীখ্যাত বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বাঁধাকপি এখন মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩৪ কন্টিনারে করে ৭১৪ মেট্রিক টন অর্থাৎ ৪ লাখ ৮ হাজার পিস বাঁধাকপি পাঠানো হয়েছে দুই দেশে। আরও ১৬ কন্টিনারে ৩৩৬ মেট্রিক টন কপি পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

বাঁধাকপি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। তারা বলেছেন, সবজির এ ভরা মৌসুমে যখন উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সবজি বাজারখ্যাত মহাস্থানহাটে ২ থেকে ৫ টাকা মূল্যে প্রতিটি বাঁধাকপি বিক্রি হয়,সেখানে ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। যেসব চাষি সরাসরি জমি থেকে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে কপি বিক্রি করছেন তারা আরও বেশি দাম পাচ্ছেন।

বাজারে বাঁধাকপি প্রতি পিস সর্বোচ্চ ১০-১২ টাকা দামে বিক্রি হলেও রফতনিকারক প্রতিষ্ঠান তা কিনছে ১৩ থেকে ১৬ টাকায়। জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার পূর্ব জাহাঙ্গীরাবাদ পানাতেপাড়ার যুবক সাগর হোসেন বিদেশে এ বাঁধাকপি পাঠানোর উদ্যোক্তা। তার মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে বগুড়ার বাঁধাকপি।

এ দুই দেশে ১ হাজার ৫০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি পাঠানোর জন্য তিনি ইতোমধ্যেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এ কপিসহ অন্যান্য সবজি বিদেশে পাঠাতে বিশেষ প্যাকেজিং কাজের জন্য তিনি নিজ বাড়িতেই প্যাকিংব্যাগ তৈরির কারখানাও স্থাপন করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার জানান, বগুড়ার মধ্যে শিবগঞ্জ মূলত সবজিপ্রধান।

এ উপজেলার জমিগুলো তিন ফসলি হলেও অধিকাংশ জমিতে বছরজুড়েই নানা সবজি উৎপাদন হয়। তার মধ্যে এবার ৩০০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি এবং ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩২ টন হিসেবে ৩০০ হেক্টর জমিতে এবার ৯ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি উৎপাদন হবে।

মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বাঁধাকপি রফতানির উদ্যোগ নেওয়ায় এবার কৃষকদের হাটে হাটে এ সবজি নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে না। যদিও তারা বাঁধাকপি কেনার ক্ষেত্রে আগে থেকেই কৃষকদের কিছু শর্ত দিয়েছে। বিশেষ করে বিদেশে রফতানির জন্য অবশ্যই সবজিকে বিষমুক্ত হতে হবে। সেই শর্ত মেনেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কপি তার কাছে বিক্রি করছেন।

এ রফতানির উদ্যোক্তা সাগর হোসেন জানান, ২০১৪ সাল থেকে তিনি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাঁধাকপি রফতানি শুরু করেন। এরই মাঝে চট্টগ্রামের মাসোয়া এগ্রো লিমিটেড নামক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আরিফ আজাদ প্রিন্স মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ঘুরে এসে ওই দুই দেশে বাঁধাকপি রফতানিতে তাকে উদ্বুদ্ধ করেন।

ইতঃপূর্বে তিনি বছরে ৬ থেকে ১০ কন্টিনারে (প্রতি কন্টিনিয়ারে ১২ হাজার পিস বাঁধাকপি যার ওজন প্রায় ২১ মেট্রিক টন) পাঠিয়েছেন। কিন্তু এবার ওই দুই দেশের ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তিনি আগাম ৫০ কন্টিনারে কপি পাঠাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ইতোমধ্যে কপি জমি থেকে উত্তোলন করে কৃষকরা তার কাছে পৌঁছাতে শুরু করেছেন।

তিনি নগদ টাকায় তাদের কাছ থেকে সেসব কপি কিনে উপজেলা সদরের কাফেলা কোল্ড স্টোরেজে তা প্যাকেজিং করে পাঠাতে শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাজারে কপি বিক্রি করে প্রতি পিসে কৃষকরা যে টাকা পেতেন তার কাছ থেকে তার চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি পাচ্ছেন। তিনি প্রতি পিস কপি নিচ্ছেন ১৩ থেকে ১৬ টাকায়, আর মহাস্থান বাজারে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০-১২ টাকায়। তিনি জানান, সরকার সবজি রফতানিতে শতকরা ২০ ভাগ ভর্তুকি ঘোষণা করায় বেশি দামে কৃষকদের কাছ থেকে কপি কিনতে পারছেন।

কারণ কেনা দামও যদি বিদেশ থেকে পান তাতেও তার কোনো ক্ষতি হবে না। সরকারের দেওয়া ২০ ভাগ ভর্তুকির টাকাই তার লাভ হবে। তিনি এ বছর আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার কপি বিদেশে পাঠাবেন। শিবগঞ্জের ইউএনও আলমগীর কবির এ উদ্যোগকে কৃষিবান্ধব উল্লেখ করে বলেন, যখনই কোনো পণ্য বিদেশে যাবে তখন যেমন এলাকার সুনাম বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সেই এলাকার কৃষকরা লাভবান হবেন। সেই কাজটিই এখন শুরু হয়েছে শিবগঞ্জে। আলুর পর বাঁধাকপি রপ্তানি এ অঞ্চলে নতুন অর্থনীতির দ্বার উন্মোচন করেছে।

সর্বশেষ সংবাদ

মুজিববর্ষের নামে ভাস্কর্য-ম্যুরালে হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট: শফিকুল আলম

মুজিববর্ষের নামে কত টাকা অপচয় করা হয়েছে তা বর্তমান সরকার খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ