বার বার ব্যর্থ হলেও হাল ছেড়ে না দিয়ে পরিশ্রম করে গেলে যে সাফল্য আসতে বাধ্য তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের প্রফুল বিল্লোর। তিন বার ‘ক্যাট’ পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেননি। ভাঙা হৃদয়ে শেষে রাস্তায় রাস্তায় চা বিক্রি করতে শুরু করলেন। হয়ে উঠলেন ভারতের জনপ্রিয় চা বিক্রেতা ‘এমবিএ চাওয়ালা’। সেরা বিজনেস স্কুলে সুযোগ পাননি ঠিকই, কিন্তু অন্যতম সেরা ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন।
প্রফুলের চাওয়ালা হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে ব্যর্থতা। ব্যর্থতাই জীবনকে অন্য ভাবে দেখতে শিখিয়েছিল। আজ বিশ্বের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভাষণ দিয়ে আসেন তিনি। প্রকৃত ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার শিক্ষা দেন। ২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেতে টানা ৩ বছর ‘ক্যাট’ পরীক্ষা দেন প্রফুল। দিন রাত জেগে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু ওই ৩ বারই তিনি ব্যর্থ হন। অত্যন্ত ভেঙে পড়েছিলেন। শেষে আহমেদাবাদে যেয়ে ম্যাকডোনাল্ডের আউটলেটে কাজ শুরু করলেন। সারাদিন ধরে ঝাড়ু দিতেন আউটলেটে। কখনও কখনও ক্রেতাদের থেকে অর্ডারও নিতেন এবং খাবার পরিবেশন করতেন। এ ভাবেই চলছিল। কিন্তু নিজের কিছু করার ইচ্ছা থেকেই চা বিক্রির কথা মাথায় আসে তার। এমবিএ কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়ে কেটলি, কাপ, ট্রে এবং চা তৈরির সমস্ত কাঁচামাল কিনে পরদিন থেকেই রাস্তায় বিক্রি করতে শুরু করেন। ইংরেজি বলা চাওয়ালাকে পছন্দ করতে শুরু করলেন মানুষ। প্রথম দিন ৫ জন গ্রাহক, পর দিন ২০ জন, তার পর দিন ১০০ জন… এ ভাবে ক্রমে বাড়তে থাকে বিক্রিবাটা। দু’সপ্তাহের মধ্যে তার ব্যবসা এতটাই ফুলে ফেঁপে ওঠে যে আশেপাশের চা বিক্রেতাদের ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠলেন। জোর করে তার দোকান তুলে দেয়া হল। পরের কয়েক সপ্তাহ আর দোকান দিতে পারেননি তিনি। সে সময় গ্রাহকেরাই তাকে খুঁজতে শুরু করলেন।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন অনেকে। ফের চায়ের কেটলি নিয়ে আহমেদাবাদের অন্য জায়গায় দোকান দেন তিনি। প্রফুল শুধু চা বেচতেন না, গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের নিত্যনতুন ভাবনা নিয়ে হাজির হতেন। নিজের দোকানের নামকরণ করলেন ‘এমবিএ চাওয়ালা’। এমবিএ-র পুরো অর্থ মিস্টার বিল্লোরে আমদাবাদ।
আহমেদাবাদে ৩০০ বর্গ ফুটের দোকান রয়েছে তার। তাতে এখন ২০ জন কর্মচারী কাজ করেন। সেরা বিজনেস স্কুলে ভর্তি না হয়েও প্রফুল আজ কোটিপতি। ২০১৯-’২০ সালে ব্যবসার টার্নওভার ছিল ৩ কোটি টাকা। শিক্ষার্থীদের ভাষণ দিতে আইআইএম কিংবা হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে প্রায়ই ডাক পান। তার কাহিনি মনোবল বাড়ায় শিক্ষার্থীদের। সূত্র: দ্য বেটার ইন্ডিয়া।