spot_img

ঘুরে দাঁড়াক বিশ্ব, নতুন বছরে নতুন আশায় জাগবে জীবন

অবশ্যই পরুন

করোনার আগ্রাসনে বিপর্যস্ত পৃথিবী। করোনাভাইরাসের মরণ ছোবলে এখনও প্রতিদিন গোটা বিশ্বে মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ। এটি কোন বিশ্ব মোড়লের যুদ্ধে নিক্ষিপ্ত মারণাস্ত্রের আঘাতে মৃত্যু নয়, করোনা নামক অদৃশ্য ভাইরাসের সঙ্গে প্রতিদিনই যুদ্ধ করতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। আরও কত মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে করোনাভাইরাসটি (কোভিড-১৯) তার সংহার তাণ্ডব বন্ধ করবে তা এখনও কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না।

নদীর স্রোতের মতো মানুষের জীবন কখনও থেমে থাকে না। তমসা কেটে তেজদীপ্ততা ছেড়ে মলিন হয়ে বৃহস্পতিবার সূর্যাস্ত হয়েছে সূর্যিমামার। আর এই সূর্যাস্ত শেষে দিবাগত রাতের প্রথম প্রহরেই প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসাব নিয়ে পৃথিবীকে বিস্ময় করে বিদায় নিলো একটি আলোচিত ভয়াল বছর। বিশ্বের বয়স বাড়লো আরও এক বছর। তবে সেই বছরটি করোনা নামক দানব ভাইরাসের মরণ ছোবলে গোটা বিশ্বকেই যেন নীল করে দিয়েছে। ‘করোনামুক্ত বিশ্ব’ দেখার প্রত্যাশার ঝাঁপি খুলে আজ শুক্রবার বিশ্বময় আশাজাগানিয়া যে নতুন সূর্যটি উঠেছে, সেটি নতুন বছরের। বিদায় বিস্ময় ২০২০, স্বাগত ২০২১ সাল।

করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় জানিয়ে সবাইকে খ্রিস্টীয় নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাইরাস আতঙ্কের ২০২০ পেরিয়ে ২০২১ সালে মহামারী মোকাবেলার লড়াইয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘নববর্ষ সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। মহামারীর ভয়াবহতাকে মোকাবেলা করে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ- নববর্ষে এ প্রত্যাশা করি।’

অনাদিকাল থেকে সৌরজগতের নিখুঁত নিয়মে প্রতিদিন সূর্যোদয় হয়। প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে। শীতের কুয়াশা সরিয়ে উঁকি দিয়েছে উজ্জ্বল রোদ। কিন্তু অন্য যে কোন দিনের চাইতে আজকের ভোরের আলোতে যেন বেশি মায়া মাখানো। যেন নতুন স্বপ্নের কথা বলছে। বলছে, সামনের দিনগুলোতে করোনাসহ সকল অনিশ্চয়তা কেটে গিয়ে শুভময়তা ছড়িয়ে যাবে দেশে, পৃথিবীময়। আশাজাগানিয়া সূর্যকিরণ যেন সে দ্যুতিই ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রত্যেকের প্রাণে, মনে।

তবে বিদায়ী বছরকে কোনদিনই ভুলতে পারবে না বিশ্বের মানুষ। কেননা বছরটি ছিল মানব জাতির জন্য খুবই বিস্ময়। শুধু নিকট ভবিষ্যত নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বারবার গল্প হয়ে ফিরবে বিদায়ী সালটি। কারণ পুরো বছরটি কেটেছে আতঙ্ক, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তায়। পুরো বছর ধরেই কেটেছে করোনাভাইরাসের মরণ-ভীতি। কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ, এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে ঘরের মধ্যে বন্দী থাকতে বাধ্য করেছিল এই প্রাণঘাতী ভাইরাস।

তবে বছর বিদায়ের আগেই অবশ্য আশার আলো দেখিয়েছে চিকিৎসা-বিজ্ঞান। স্বল্পতম সময়েই আবিষ্কার হয়েছে ভ্যাকসিন, প্রয়োগও শুরু হয়েছে দেশে দেশে। বিশ্বের সব মানুষের এখন একটাই আশা- করোনা ঝড় মোকাবেলায় সক্ষম হোক মানুষ, পৃথিবী ছেড়ে দূর হোক প্রাণঘাতী কোভিড-১৯। ২০২০-কে বিদায় জানাতে ভারাক্রান্ত হয়নি কোন মানুষের, কারণ বিশ যে বিষ ছড়িয়েছে বেশি। তাই নতুন বছর ২০২১-কে স্বাগত জানানো হবে আশায় বুক বেঁধে। কারণ একুশ যে আমাদের চেতনার সঙ্গে মিশে আছে। তাই ২০২১ হোক করোনামুক্ত নতুন আশা ও প্রেরণার বছর।

অশুভ শক্তির মিথ্যা বোধ, প্রজন্মের নষ্ট হয়ে যাওয়া মুখগুলোর আস্ফালনের অশুচি কাটিয়ে অস্তাচলে গেল যে সূর্যটি, আজ পূর্বদিগন্তে শাশ্বত সেই সূর্যেরই উদয়ন হয়েছে নতুন সৌন্দর্যের আবহন ঘটিয়ে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে নবোদয় ঘটেছে এক নতুন প্রজন্মের- যে প্রজন্মের কাছে মায়ের মতো পবিত্র তার দেশ, সূর্যের মতো সত্য তার মুক্তিযুদ্ধ আর উন্নয়নের জ্যোতির মতোই দ্যুতি ছড়ানো তার ভবিষ্যত। তাই একাত্তরের মতোই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অবিস্মরণীয় অগ্রযাত্রা আর স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তিকে আগের মতো বারবার পরাজিত করার দৃঢ় শপথে নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছে দেশের মানুষ।

করোনার ভয়াল তাণ্ডব এখনও কমেনি। তবুও তমসা কেটে পূর্ব দিগন্তে আবহমান সূর্য আবার শুরু করল নতুন যাত্রা। ‘সময় আর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না’- এই সত্যকে বির্মূত করে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ। মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল আরেকটি বছর ২০২০। শুরু হলো নতুন বছর ২০২১। সুপ্রভাত বাংলাদেশ; স্বাগত ২০২১। হ্যাপি নিউইয়ার ২০২১। অভিবাদন নতুন সৌরবর্ষকে। আর এই নতুন বছরে, মুজিব শতবর্ষ আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সন্ধিক্ষণে সবার অঙ্গীকার হোক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের।

সেই একই সূর্য, একইভাবে উঠছে পূর্বাকাশ আলো করে। তবু তার উদয় ভিন্নতর। আজকের দিনটিও আলাদা, কারণ একটি নতুন বর্ষপরিক্রমা শুরু হলো আজ শুক্রবার থেকে। সোনালি স্বপ্নের হাতছানি নিয়ে উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। ভরা পৌষে কুয়াশার হিমেল চাদর ছিন্ন করে উদ্ভাসিত হলো সোনালি আলোর সকাল। কালপরিক্রমায় দ্বারোদঘাটন হলো প্রকৃতির নতুন নিয়মে নতুন বৎসর ২০২১’র। চেতনায় জাগ্রত আবহমান সেই মাঙ্গলিক বোধ- অতীতের জীর্ণতা অতিক্রান্ত দিনমাসপঞ্জির হিসাব থাক বিস্তৃতির কালগর্ভে, প্রত্যাশায় বুক বাঁধি নতুন দিনের সূর্যোলোকে- তবে উদ্ভাসন হোক সজীব-সবুজ নতুনতর সেই দিনের- যা মুছে দেবে অপ্রাপ্তির বেদনা; জাগাবে নতুন প্রত্যয়ে নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবার প্রেরণা।

গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী ইংরেজী নববর্ষের প্রথম দিন আজ। আজ ২০২১ সালের প্রথম দিন। আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/ তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতোই দুঃখ, কষ্ট, করোনার ভয়-ভীতি সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ। নতুন বছরটি যেন পৃথিবী করোনামুক্ত হয়, প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। বিশ্ব থেকে বিতাড়িত হয় ঘাতক করোনাভাইরাস। আমাদের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত প্রিয় স্বদেশ আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশে ইংরেজী নববর্ষ পালনের ধরন বাংলা নববর্ষ পালনের মতো ব্যাপক না হলেও এ উৎসবের আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া থেকে বাংলাদেশের মানুষও বিচ্ছিন্ন নয়। বিশ্বের বয়স আরও এক বছর বাড়ল। এক বছরের ‘আনন্দ-বেদনা, আশা-নৈরাশ্য আর সাফল্য-ব্যর্থতার পটভূমির ওপর আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই প্রিয় বাংলাদেশ নতুন বছরে পর্বতদৃঢ় একতায় সর্ব মহামারী-বিপর্যয়-দুঃসময়কে জয় করবে অজেয়-অমিত শক্তি নিয়ে’- এ সংকল্পের সোনালি দিন আজ। আলোড়ন আর তোলপাড় করা ঘটনাবহুল ২০২০-এর অনেক ঘটনার রেশ নিয়েই মানুষ এগিয়ে যাবে। ভাগ্যাকাশে আনন্দ-বেদনা প্রত্যাশা আর দুর্যোগের ঘনঘটা নিয়েই বাঙালীর বছর ফুরোল। সূচনা হলো আরও একটি বর্ষযাত্রার।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলকে রীতিমতো বিপর্যন্ত ও অস্তিত্বের কিনারে ঠেলে দিয়ে মহাকালের অতল গর্ভে বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চলে গেছে বিদায়ী বছর ২০২০। আবহমান সূর্য একটি পুরনো বছরকে কালস্রোতের ঊর্মিমালায় বিলীন করে আবার শুরু করল যাত্রা। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত ইংরেজী নতুন বছর শুরু হলো। লাখো প্রত্যাশার ঝাঁপি খুলে এবং সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশায় আজ ভোরে কুয়াশায় ঢাকা পূর্বাকাশে উদয় হয়েছে নতুন বছরের লালসূর্য।

আজ নতুন দিনের নতুন সূর্যালোকে স্নান করে সিক্ত হবে জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সব শ্রেণী পেশার মানুষ। সব কালিমা ধুয়ে-মুছে নতুন কেতন ওড়াতে ওড়াতে এগিয়ে যাবে সময়, সভ্যতা, হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানিমুক্ত রাজনীতি, অর্থনীতি আর সংস্কৃতি। অনাবিল স্বপ্ন আর করোনামুক্ত পূর্বের মতো সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন আর অফুরন্ত প্রণোন্মাদনা নিয়ে নতুন সূর্যের আলোয় অগ্রসর হবে মানুষ। বিগত সময়ের সব ভুল শুধরে নেবার সময় এসেছে আজ।

জাতির অনেক আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হবার বছর এটি। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবী করোনামুক্ত হবে। বাংলাদেশের মানুষও সেই প্রত্যাশায় বুক বেঁধে নতুন বছরটি শুরু করেছে। তাই নতুন বছরকে স্বাগতম ভয়াল মহামারী করোনামুক্ত সুখ-সমৃদ্ধি, উন্নয়ন-অগ্রগতি আর জঙ্গী-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায়। খ্রিষ্টীয় নববর্ষের প্রথম দিন আজ। প্রাচীন সূর্য বৃহস্পতিবার যে দিবসকে কালস্রোতে বিলীন করে পশ্চিমে অস্ত গেল, তা আজ ফেলে আসা দিন। প্রতিবছর থার্টি ফার্স্টে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ পরমানন্দে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। করোনার কারণে সেটি এবার হচ্ছে না। তবুও বিশ্বের মানুষ নানা আয়োজনে নতুন বছর ২০২১-কে বরণ করেছে নতুন নতুন স্বপ্ন নিয়ে।

যারা মহামারীর এই সময়ে ২০২০ সালটা পার করেছেন, তারা হয়তো নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। তবে মুছে যাবে গ্লানি, ঘুচে যাবে সব জরা- এমনটা আশা করা হয়তো একটু বেশি হয়ে যাবে। কেননা নতুন বছর ২০২১ সালের ২১ নম্বরটার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে করোনার ভয়াল থাবা। তবে শুধু আমাদের দেশেরই নয়, গোটা বিশ্বের মানুষ দৃঢ় আশাবাদী যে, করোনা মহামারী থেকে সবারই উত্তরণ ঘটবে। করোনা ভ্যাকসিনের বদৌলতে পুরো বিশ্ব থেকে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস বিদায় নেবে।

২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দ কোভিড-১৯ বা মরণব্যাধি করোনাভাইরাস। বিশ্ব অর্থনীতিকে পঙ্গু করেছে অদৃশ্য ভয়াল এই ভাইরাসটি। পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী প্রায় ৪০০ কোটি মানুষকে মাসের পর মাস ঘরবন্দী থাকতে বাধ্য করেছে এই মহামারী। প্রায় ৮ কোটি মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। আরও কত মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে করোনা তার সংহার তাণ্ডব বন্ধ করবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। কারণ এখনও দেশে দেশে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিনই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুবরণ করছে।

নানা ধরনের দুর্যোগ-দুর্বিপাক, মড়ক-মহামারীর অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর আছে। প্রাণঘাতী অসুখও আগে একাধিকার হয়েছে। মহামারীতে মৃত্যুর ঘটনাও নতুন নয়। কিন্তু অদৃশ্য প্রাণঘাতী করোনা নামক ভাইরাসটি পৃথিবীজুড়ে মানুষের মধ্যে যে ভয় ও অসহায় অবস্থার তৈরি হয়েছে তা তুলনাহীন। তাই ২০২০-কে বিদায় জানাতে এবার মানুষের মন ভারাক্রান্ত হয়নি। কারণ বিশ যে বিষ ছড়িয়েছে বেশি। তাই নতুন বছর ২০২১-কে মানুষ স্বাগত জানাচ্ছে নতুন আশায় বুক বেঁধে। কারণ একুশ যে আমাদের চেতনার সঙ্গে মিশে আছে। তাই ২০২১ হোক করোনা মহামারীমুক্ত আশা ও প্রেরণার বছর।

তবে বছর বিদায়ের আগেই অবশ্য আশার আলো দেখিয়েছে চিকিৎসা-বিজ্ঞান। স্বল্পতম সময়েই আবিষ্কার হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন। কয়েকটি দেশে ভ্যাকসিনটির ব্যবহারও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশও নতুন বছরের শুরুতেই ভ্যাকসিনটি পাবে। সমতার ভিত্তিতে সবার কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছাতে কত সময় লাগবে, এটা কতটা সহজলভ্য হবে- তা নিয়ে সংশয় থাকলেও আশাহত হওয়ার কিছু আছে বলে দেশের মানুষ মনে করে না।

করোনার কারণে এবার উন্নত বিশ্বেও বর্ষবরণের কোন ব্যাপকতা ছিল না। তবুও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পরই সারাবিশ্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। হিসাবের খাতায় ব্যর্থতার গ্লানি মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নতুন বছরে শান্তিকামী মানুষের প্রার্থনা ছিল- করোনামুক্ত সুন্দর পৃথিবীর। আর কোন সহিংসতা নয়, কোন হত্যা-খুন কিংবা হানাহানির রাজনীতি নয়, ২০২১ হবে শান্তির বীজ বপনের সাল। অস্ত্র বা হানাহানির মহড়া হবে না, থেমে যাবে সব যুদ্ধ-সন্ত্রাস। সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী টানা হ্যাট্টিকবার ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার নতুন বছরেও উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রেখে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী উন্নত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে।

একযুগ ধরেই চালকের আসনে শেখ হাসিনা ॥ বিদায়ী বছরেও রাজনীতিতে চালকের আসনে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু বিদায়ী বছর ২০২০ নয়, ক্ষমতার গত এক যুগ ধরে দেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক। তাঁর দৃঢ় ও সাহসী নেতৃত্ব, মানবিক গুণাবলি আর কৌশলী অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ আজ নব-পরিচয়ে পরিচিতি পাচ্ছে গোটা পৃথিবীতে। বিদায়ী বছরে প্রাণঘাতী করোনা মহামারীসহ শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাওয়ার রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। আর এই এগিয়ে যাওয়ার গল্পের প্রধান কারিগরই হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও রেকর্ড সংখ্যক চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা।

নতুন বছরের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার যুগপূর্তি হচ্ছে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আগামী ৬ জানুয়ারি পূরণ হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের টানা এক যুগ। এ যুগপূর্তি আর বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে নানাভাবেই বিশ্লেষণ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিদায়ী ২০২০ বছরটাও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শুরু করেছিল উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাযজ্ঞ নিয়েই। কিন্তু হঠাৎ করেই করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীতে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। গত এক বছরে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে বিশ্ব ব্যবস্থা টালমাটাল। করোনায় প্রভাব ফেলে উন্নয়ন, অগ্রগতি, অর্থনীতি- এমনকি রাজনৈতিক পরিস্থিতিও। করোনার আঘাতে বিশ্বের মোড়ল বলে খ্যাত উন্নত দেশগুলোও যখন বিপর্যন্ত, অর্থনীতি-রাজনীতি স্তব্ধ।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও বিশ্বকে তাক লাগিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বিদায়ী বছরে ভয়াল করোনা সফলভাবে মোকাবেলা, স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির চাকাকে সচল করে রাখা, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা, মেট্টোরেলের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়া, করোনায় একটি মানুষকে বুভূক্ষ যেন না থাকে সেজন্য সবার ঘরে ঘরে খাদ্য-নগদ অর্থ পৌঁছে দেয়ার বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পাশাপাশি পুরো বছর ধরে রাজনীতির মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে সর্বত্র উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সমান্তরালভাবে ব্যবহার করে করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি বিশাল অঙ্কের প্রণোদনা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল, দলে শুদ্ধি অভিযান, সম্মেলন হয়ে যাওয়া জেলা-মহানগরসহ সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে দলকে সারাদেশে চাঙ্গা করে তোলা, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোতে ক্লিন ইমেজের নতুন নেতৃত্ব গঠন, দুর্নীতিবিরোধী অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের কাছে বিস্ময়। আর বিস্ময়কর সাফল্যের কারিগরই হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের দেশের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি শুধু দেশেই নয়, এখন সারাবিশ্বও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিশেষ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং নিজ ঘর থেকে শুদ্ধি অভিযানের সাহসী পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাসকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে ভয়াল করোনার ভয়াল থাবা থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা, দ্রুত ভ্যাকসিন এনে মানুষের দেহে প্রয়োগ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন, জঙ্গীবাদ দমন, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত, বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতাবিরোধী অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিরোধ, অর্থনীতির আরও গতিসঞ্চার, সংসদকে কার্যকর করে নতুন বছরে একটি শান্তিময় সমৃদ্ধিশালী দেশ উপহার দিতে ২০২১ সাল সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েই সামনে এসেছে। দলের মধ্যে সৃষ্ট অনৈক, বিভেদ ও দ্বন্দ্ব দ্রুত মিটিয়ে দলের সকল সাংগঠনিক শক্তিকে ইস্পাতকঠিন ঐক্যে’র বাঁধনে বাঁধাও নতুন বছরে বর্তমান সরকারের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।

উগ্র ধর্মভিত্তিক-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আবারও বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে কিনা, নতুন বছরে এ কঠিন সিদ্ধান্তটি নিষ্পত্তি করতে হবে সরকারকে। হঠাৎ করে মাথা তুলে দাঁড়ানো জঙ্গীবাদী অপশক্তির শিকড় সমূলে উৎপাটন ও এদের নেপথ্যের গডফাদারদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর বিশাল চ্যালেঞ্জও রয়েছে সরকারের সামনে। তাই গত বছরের মতো নতুন বছরেও জঙ্গীবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের পালিত সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের মাথা তুলে দাঁড়াবার সম্ভাবনা কম।

গত বছরে রাজনীতির মাঠ ছিল বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই শান্ত। গত এক বছরে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে নামতেই পারেনি বিএনপি। ছিল না হরতাল কিংবা আগুনে পোড়া, বোমায় বিধ্বস্ত কোন শোকাতুর পরিবেশ। দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র শক্তহাতে মোকাবেলা করে সৃষ্টির জাগরণে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এখন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সত্য ইতিহাস যাতে আগামী প্রজন্ম যুগ যুগ ধরে লালন-পালন করতে পারে- নতুন বছরে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।

তাই বিপুল প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ থেকে যাত্রা শুরু করলো আরও একটি নতুন বছর। নতুন খ্রিস্টাব্দের সূচনামুহূর্ত নিয়ে উচ্ছ্বাস-উল্লাস বাঙালী সংস্কৃতির নিজস্ব কোন অঙ্গ না হলেও পাশ্চাত্য-প্রভাবে শহরাঞ্চলে এর ব্যাপ্তি ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যারা অংশ, তারা জীবিকার কঠোর সংগ্রামে, সমস্যার ভারে এতই ক্লিষ্ট বিড়ম্বিত যে, এসব নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামানোর কোন অবকাশ নেই তাদের জীবনে।

তারপরও কালপক্রিমায় নববর্ষ আসে, নতুন আশায়, স্বপ্নে উদ্দীপিত হয় মানুষ। নতুন বছরটিতে বিশ্ব করোনামুক্ত হবে, সাফল্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, মুছে যাবে ব্যর্থতার গ্লানি, এ রকম প্রত্যাশায় মানুষ উজ্জীবিত হয়। বৈশ্বিক পটভূমিতে খ্রিষ্টীয় নববর্ষের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য উপেক্ষা করার মতো নয় মোটেও। সবার প্রত্যাশা নতুন বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিদায়ী বছরের মতো করোনা মোকাবেলা করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে।

ক্ষমতার গত এক যুগে অনেক কিছু ঘটলেও দেশবাসীর সামনে আশার উজ্জ্বল বাতিঘর হয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্যোগ-দুর্বিপাক-সঙ্কটে তাঁর উপস্থিতি মানুষকে আশ্বস্ত করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে। শেখ হাসিনা আছেন, কাজেই উপায় একটা হবেই- এই ভরসার জায়গাটি অবিচল থাকায় আমাদের এগিয়ে চলা বন্ধ হয়নি।

ইংরেজী নববর্ষের শুভলগ্নে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন এই বছরটি মুজিববর্ষের পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ইস্যুতে বছরজুড়েই নানা অনুষ্ঠানমালা।

গোঁধুলী বেলায় রক্তিম সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেছে ঘটনাবহুল ২০২০ সালটি। উদিত হয়েছে নতুন বছরের নতুন সূর্য। প্রত্যাশা কেবল মানুষের করোনামুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ, শান্তি, স্বস্তি, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ, শক্তহাতে জঙ্গী-সন্ত্রাসী দমন এবং সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির দেশ গড়ার। চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা রেখেই আজ শুক্রবার থেকে যাত্রা শুরু হলো নতুন বছরের। স্বাগত ২০২১, বিদায় ২০২০।

সর্বশেষ সংবাদ

ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সুফল পেতে দরকার রাষ্ট্র সংস্কার: প্রধান উপদেষ্টা

ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সুফল পেতে দরকার রাষ্ট্র সংস্কার। আর এ কাজে সবার থেকে পরামর্শ চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড....

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ