একটি শিশু যখন পৃথিবীতে আসে তখন সবকিছুই তার কাছে অপরিচিত। সে এতটাই ছোট থাকে যে নিজের কোনো কাজই নিজে করতে পারে না। মা-বাবা ও অভিভাবকের সাহায্য নিয়ে সে ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে। সদ্যজাত শিশুর সঠিক যত্ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন অনেকে। বিশেষ করে নবজাতকের গোসল নিয়ে মুশকিলে পড়তে হয় বেশিরভাগ মাকে। কতদিন পরপর গোসল করাতে হবে, পানি কি ঠান্ডা হবে না কি হালকা গরম- এমন আরও অনেক প্রশ্ন জেগে ওঠে মনে।
নবজাতককে গোসল করানোর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন এই বিষয়গুলোর প্রতি-
নবজাতকের ত্বক কিন্তু বড়দের মতো হয় না। তাদের ত্বক থাকে খুবই সংবেদনশীল। একারণে সদ্যজাত শিশুকে সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুই কিংবা তিনদিন গোসল করানো যেতে পারে, এর বেশি নয়। প্রতিদিন তাকে গোসল করানোর কোনো দরকার নেই। শিশুর নাড়ি ঝরে না যাওয়া পর্যন্ত স্পঞ্জ বাথই যথেষ্ট।
শিশুটি যেহেতু পৃথিবীতে একেবারেই নতুন, তাই এর পরিবেশের সঙ্গে তার খাপ খাইয়ে নিতে অনেকটা সময় লেগে যায়। জন্মের পর শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে ভীষণ দুর্বল। শিশুর ত্বক থাকে সংবেদনশীল, তাতে ধীরে ধীরে জমা হওয়া নানা রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে সে লড়াই করতে পারে না। গোসল শিশুর ত্বকের উপরে থাকা ক্ষতিকর জীবাণুদের দূর করে, লোমকূপ বা ত্বকের ছিদ্রে জমা হওয়া আস্তরণ তুলে ফেলে। এর ফলে শিশুর শরীরে জমা বিষাক্ত পদার্থ ঘামের সঙ্গে বের হয়ে যায়।
গোসলের জন্য শিশুকে সমতল ও উষ্ণ জায়গায় শুইয়ে নিন। এরপর তার সমস্ত শরীর ভেজা ও নরম কাপড় দিয়ে হালকাভাবে মুছে নিন। যখন শিশুর শরীরের যে অংশ মুছবেন, কেবল তখনই শুধু সেই অংশের কাপড় খুলবেন। নয়তো শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
শিশুর গা মোছানোর জন্য পানি সামান্য গরম করে নিতে পারেন। তাতে পাতলা সুতির কাপড় বা স্পঞ্জ ভিজিয়ে গা মোছাবেন। নবজাতকের গোসলের জন্য পাঁচ-দশ মিনিটের বেশি সময় খরচ করবেন না। প্রথমে শিশুর মুখ পরিষ্কার করুন, এরপর অন্যান্য অংশ।
অনেকে সদ্যজাত শিশুর গোসলের জন্য সাবান ব্যবহার করেন। এটি একদমই ঠিক নয়। কারণ সাবানে অতিরিক্ত ক্ষার থাকে যা শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই শিশুর ত্বকের উপযোগী কোনো বডি ওয়াশ ব্যবহার করুন।
শিশুর গোসলের আগে পানির তাপমাত্রা হাত দিয়ে দেখে নিন। শিশুর গোসলের জন্য খুব বেশি ঠান্ডা কিংবা গরম পানি ব্যবহার করবেন না। কারণ এই দুটিই শিশুর জন্য ক্ষতিকর। শিশুর ত্বক সহ্য করতে পারবে, এমন উষ্ণ গরম পানি নিন।
নবজাতকের জন্য গোসলের সঠিক জায়গা নির্বাচন করা জরুরি। খেয়াল রাখবেন,নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল হয়ে থাকে। আপনার বাসা যদি বেশ ঠান্ডা হয় তবে যে স্থান সবচেয়ে উষ্ণ, শিশুকে সেখানে গোসল করানোর ব্যবস্থা করুন। শিশুর জন্য খুব বেশি গরম কিংবা ঠান্ডা কোনোটিই উপযোগী নয়।