ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের আজ দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবলীল সূচনা করে ৬ রান যোগ করলেও দিনের তৃতীয় ওভারেই বিচ্ছিন্ন হন সাকিব-লিটন জুটি। ওয়ারিক্যানের হানায় ৯৩তম দ্বিতীয় বলেই কাটশট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় লিটনকে। ফেরার আগে ছয়টি চারে ৩৮ রান করেন ৬৭ বল খেলার এই উইকেটকীপার।
যাতে ২৪৮ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারালো বাংলাদেশ। সাকিব ক্রিজে আছেন ৪৩ রান নিয়ে, সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মেহেদী মিরাজ। এর আগে প্রথম দিন শেষে ৯০ ওভার ৫ উইকেটে ২৪২ রান করে বাংলাদেশ। হাফ-সেঞ্চুরি তুলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করেছেন ওপেনার সাদমান ইসলাম।
বুধবার ম্যাচের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে মধ্যাহ্ন-বিরতি পর্যন্ত ২৯ ওভারে ২ উইকেটে ৬৯ রান তুলেছিলো বাংলাদেশ। পরের সেশনে অর্থাৎ চা-বিরতি পর্যন্ত ৫৮ ওভারে ৪ উইকেটে ১৪০ রান তোলে টাইগাররা। ফলে প্রথম দুই সেশন শেষে চাপে পড়েছিলো স্বাগতিকরা। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ৯৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৯ রান করে দিন শেষে দলকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যান সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস।
এর আগে প্রত্যাবর্তন টেস্টে সাকিবসহ চার স্পিনার ও এক পেসার নিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। দলের হয়ে ইনিংস শুরু করেন দুই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম ও তামিম ইকবাল।
ইনিংসের প্রথম ডেলিভারিতেই কভার দিয়ে দারুণ এক শটে বাউন্ডারি আদায় করে নেন সাদমান। এরপর সাদমানের ব্যাট থেকে আরও ১টি ও তামিমের ব্যাট থেকেও ২টি চার আসে। এতে ৪ ওভার শেষে ২৩ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এই স্কোরে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্বাগতিক দুই ওপেনার।
কিন্তু পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে ৯ রান করা তামিমকে বোল্ড করে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডান-হাতি পেসান কেমার রোচ। দলীয় ২৩ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর উইকেটে আসেন আরেক বাঁ-হাতি নাজমুল হোসেন শান্ত। মুখোমুখি হওয়া চতুর্থ বলেই বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেন শান্ত। এরপর সাদমানকে নিয়ে দক্ষতার সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সামাল দেন শান্ত। ১৮তম ওভারে দলের স্কোর ৫০ স্পর্শ করেন সাদমান-শান্ত।
তবে ২৪তম ওভারের প্রথম বলে সাদমানের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটের ফাঁদে পড়েন শান্ত। ৩টি চারে ৫৮ বলে ২৫ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে সাদমানের সাথে ১১২ বলে ৪৩ রান যোগ করেন শান্ত। তার আউটের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মোমিনুল হক। মধ্যাহ্ন বিরতির আগ পর্যন্ত আর কোন উইকেটের পতন ঘটেনি। সাদমান ৮২ বলে ৪টি চারে ৩৩ ও মোমিনুল ২ রান নিয়ে বিরতিতে যান।
বিরতির পর ফিরে সাবধানতার সাথেই খেলছিলেন সাদমান ও মোমিনুল। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাঁ-হাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিকানকে বাউন্ডারি মেরে সপ্তম টেস্টে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সাদমান। ২০১৮ সালে মিরপুরে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৭৬ রান করেছিলেন তিনি। এরপর ১০ ইনিংসে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি সাদমান।
১২৮তম বলে সাদমানের হাফ-সেঞ্চুরি পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অধিনায়ক মোমিনুল। ধৈর্য্যর পরীক্ষা দিয়ে খেলতে থাকা মোমিনুল খেই হারিয়ে ফেলেন। ওয়ারিকানের বলে শর্ট মিডউইকেটে জন ক্যাম্পবেলকে ক্যাচ দেন মোমিনুল। ৯৭ বলে ২টি চারে ২৬ রান করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। সাদমানের সাথে ১৬৭ বল খেলে ৫৩ রান যোগ করেন মোমিনুল।
অধিনায়ককের পতনের পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে চা-বিরতিতে যাবার স্বপ্ন দেখছিলেন সাদমান। কিন্তু সেটি হতে দেননি ওয়ারিক্যান। বিরতি হবার ১০ বল আগে সাদমানকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ১৫৪ বলে ৬টি চারে ৫৯ রান করেন সাদমান।
এতে মুশফিক ৯ ও ছয় নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান ৩ রানে অপরাজিত থেকে চা-বিরতিতে যান। বিরতি থেকে ফিরে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেয়ার চেষ্টা করেন মুশফিক-সাকিব। যেটা চেষ্টা করেও বেশি দূর যেতে পারেননি সাদমান-শান্ত-মোমিনুল।
তাদের মতোই একই পথে হেঁটেছেন সাকিব-মুশফিক। ভিত গড়ার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তারা। এতে বাংলাদেশের স্কোর দেড়শ অতিক্রম করে, দু’শর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু দু’শতে পৌঁছানোর আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান সাকিব-মুশফিক।
স্পিনার ওয়ারিক্যানের তৃতীয় শিকার হন মুশফিক। দলীয় ১৯৩ রানে মুশফিককে আউট করেন ওয়ারিক্যান। ৬টি চারে ৬৯ বলে ৩৮ রান করেন মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে ১০৮ বলে ৫৯ রান যোগ করেন তারা। মুশফিকের বিদায়ের পর লিটনকে নিয়ে আর কোন উইকেট না হারিয়ে ভালোভাবে দিন শেষ করেন সাকিব।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যান ৫৮ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া কেমার রোচ ৪৪ রানে ১টি উইকেট নেন। প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে বিসিবি একাদশের ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলা দীর্ঘদেহী অফ-স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল ২২ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।