যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি মন্তব্য করে বেলছেন, করোনা বিদায়ের পথে! এই ধারণা নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল ভারতের। মহামারির প্রথম ধাক্কার পর সংক্রমণের হার কিছুটা কমতেই খুব দ্রুত খুলে দেওয়া হয়েছিল সবকিছু। আর এর জেরেই কোভিডের দ্বিতীয় ঝড়ে দেশটির এতো বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটে মহামারি সংক্রান্ত এক আলোচনায় অংশ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ভারতে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার প্রধান কারণ প্রথম ধাক্কার পর একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। করোনা চলে গেছে ভেবে তাড়াহুড়ো করে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। পরিণাম কী হতে পারে, তা এখন আমরা নিজের চোখেই দেখছি।’
ভারতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ২ থেকে ৪ সপ্তাহের জন্য লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছেন অ্যান্থনি ফাউচি। তিনি বলেন, ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবে মানুষের মৃত্যু আটকাতেই হবে। সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে সারা দেশে দ্রুত অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে।
অ্যান্থনি ফাউচি বলেন, করোনা আবারও আছড়ে পড়তে পারে। এমনটা ধরে নিয়েই স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর জোর দিতে হবে। একেবারে আঞ্চলিক স্তরে উন্নত মানের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, করোনাকে গোটা দুনিয়া থেকেই মুছে ফেলতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। নিজের দেশের পাশাপাশি অন্য দেশেও টিকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে করোনাভাইরাসের মহামারির প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে ভারত। একদিকে হাসপাতালে বেড সংকট আবার অন্যদিকে মেডিক্যাল অক্সিজেনের সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বহু শ্মশানে শেষকৃত্যের জায়গা পর্যন্ত নেই। এমনকি শ্মশানের গেটে হাউসফুল লেখা নোটিস ঝুলিয়ে রাখার মতো ঘটনাও ঘটেছে। পাশাপাশি একের পর এক মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়ার ভয়াবহ খবরও সামনে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশটির বিভিন্ন স্থানে করোনা চিকিৎসায় গোমূত্র খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে খোদ ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটে অনেকেই গোশালায় গিয়ে নিজেদের শরীরে গোবর ও গোমূত্র মাখছে। তাদের বিশ্বাস, এতে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে কিংবা করোনা সেরে যাবে।
গুজরাটের বনষ্কণ্ঠ জেলার তেতোরা গ্রামে গোশালায় বানানো হয়েছে কোভিড কেয়ার সেন্টার। সেখানে রোগীদের অ্যালোপ্যাথি ওষুধের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে আয়ুর্বেদিক ওষুধও। আর সেই আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে গরুর দুধ ও গোমূত্র থেকে।
উত্তপ্রদেশের একজন বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিং। করোনা ঠেকাতে তিনি শুধু গোমূত্র পানের পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। কখন, কিভাবে পান করা উচিত, তাও বাতলে দিয়েছেন ক্যামেরার সামনে। তিনি বলেন, করোনা ঠেকানোর অব্যর্থ ওষুধ হলো গোমূত্র। এটি শুধু করোনাই ঠেকাবে না, বরং শরীরও সুস্থ রাখবে।
ভারতের বিভিন্ন স্থানের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা অবশ্য বারবারই এই ধরনের চর্চার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আসছেন। তারা বলছেন, এই ধরনের বিকল্প চিকিৎসা নিরাপত্তার ভুয়া বোধ তৈরি করতে পারে। আর তাতে করে স্বাস্থ্য জটিলতা আরও বেড়ে যেতে পারে।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ডা. জেএ জয়লাল বলেন, ‘গোবর কিংবা গোমূত্র করোনার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে; এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এটা সম্পূর্ণ বিশ্বাসের ওপর ভর করে চলছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব সামগ্রীর গন্ধ নেওয়া কিংবা গ্রহণ করার অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। অন্য রোগও প্রাণী থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ এছাড়া দলবদ্ধ হয়ে এই ধরনের চর্চার ফলে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন।