শিশুর বমি হলে

অবশ্যই পরুন

খাওয়াতে চাইলে ঠোঁট উল্টে ওয়াক বমির ভাব শিশুদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। তবে এটা কেবল অনিচ্ছা নয়, কোনো অসুখের লক্ষণ বা উপসর্গও হতে পারে। মাঝেমধ্যে শিশুদের বমি হতে পারে। নানা কারণে শিশুরা বমি করে থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সামান্য কারণে বমি হয় এবং তা আপনা আপনি সেরে যায়। এতে অভিভাবকরা সহজেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন কিন্তু সব বমির ক্ষেত্রে ওষুধ লাগে না। আবার বমি থামাতে গিয়ে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এতে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেক সময় শিশুদের বমি জটিল কোনো রোগের লক্ষণরূপেও দেখা দেয়। তাই বমি হলে সতর্ক হতে হবে।

কারণ
প্রসবকালে জরায়ু থেকে বের হওয়ার পর নবজাতক সামান্য কিছু লাইকার, রক্ত ইত্যাদি গিলে ফেলে। যার কারণে নবজাতক শিশু জন্মের প্রথম কয়েক দিন বমি করতে পারে। পানি ভাঙার পর প্রসবকাল খুব দীর্ঘ হলে সাধারণত এমন ঘটে। এ রকম সন্দেহ হলে নবজাতক শিশুকে প্রথম খাবার দেওয়ার আগেই অর্থাৎ মায়ের বুকে দেওয়ার আগে পাঁচ থেকে ১০ মিলি নরমাল স্যালাইন দিয়ে স্টমাক ওয়াশ করে দেওয়া ভালো। তবে বিশেষজ্ঞ শিশুচিকিৎসক ভিন্ন অন্য কারও দ্বারা ওয়াশ না করানো উচিত।

বাতাস গেলা : নবজাতক ও কম বয়সি শিশুরা প্রতিবার খাবারের সময় কিছু না কিছু বাতাস খেয়ে ফেলে। খাওয়ার পর এ বাতাস পাকস্থলী থেকে বেরিয়ে যেতে চায় ও বেরোনোর সময় সঙ্গে দুধ তুলে নিয়ে আসে, যা কখনও কখনও শিশু আবার গিলে ফেলে। তবে পরিমাণ বেশি হলে শিশু সবটুকু গিলতে পারে না এবং অনেকে এ দুধ তুলে নিয়ে আসাকে বমি বলে মনে করেন। এটি অবশ্য অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা।

আবার বুকের দুধ খাওয়ানোর ভঙ্গি যথাযথ না হলে বা শিশুকে বোতলে বা ফিডারে খাওয়াতে গেলেও শিশুর পেটে বাতাস ঢোকে। কেননা বোতল বা ফিডারের নিপলের ছিদ্র খুব ছোট হয় কিংবা স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হয়, তাহলেও শিশুর প্রচুর বাতাস খাওয়ার সুযোগ ঘটে। মায়ের দুধের বোঁটা ভেতরের দিকে বসানো থাকলে (রিট্রেকট্রেড নিপল) কিংবা মায়ের বুকে দুধের প্রবাহ শুকিয়ে এলে, তখন শিশু চুষতে থাকলেও বেশি পরিমাণে বাতাস গেলার আশঙ্কা থাকে। নবজাতক ও অল্পবয়সি শিশুর বমি করার সর্বাধিক কারণ বেশি পরিমাণে বাতাস খেয়ে ফেলা।

জন্মগত ত্রুটি : যদি এমন দেখা যায় যে জন্মের পরপরই নবজাতক শিশুর মুখে অবিরাম ফেনা বেরোচ্ছে বা ক্রমাগত মুছে কিংবা সাকসান দিয়েও থামানো যাচ্ছে না, তখন ধারণা করতে হবে ওই নবজাতকের শ্বাস ও খাদ্যনালির জন্মগত ত্রুটি থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে শিশুকে কোনো খাবার না দিয়ে বা খাওয়ানোর চেষ্টা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া।

কোনো নবজাতকের পায়খানার রাস্তা নাও থাকতে পারে। ফলে জন্মের পর আস্তে আস্তে পেট ফুলে যায়। জন্মের ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও নবজাতক পায়খানা করে না এবং দুয়েক দিন পর বমি করতে থাকে। শিশু বিশেষজ্ঞের দ্বারা রোগ নির্ণয়ের পর সফল অস্ত্রোপচারের সাহায্যে এসব ত্রুটি ইদানীং সারানো সম্ভব হচ্ছে।

আবার এমন দেখা যায় জন্মের প্রথম দুই সপ্তাহ নবজাতক শিশু সম্পূর্ণ ভালো ছিল, দু-তিন সপ্তাহ বয়সের দিকে বমি শুরু হয়েছে, বমির বেগ খুব বেশি এবং তা অনেক দূরে গিয়ে পড়ে। তা ছাড়া লক্ষ করলে পেটে নাভির বাঁ পাশে লেবুর মতো সাইজের একটি দলা বোঝা যায়। ‘কনজেনিটাল হাইপারট্রপিক পাইলোরিক স্টেনোসিস’ অর্থাৎ পাকস্থলীর নিম্নাংশের নালিপথ অত্যধিক সরু থাকার কারণে এসব লক্ষণ দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের দ্বারা রোগ নির্ণয় করে অস্ত্রোপচারের সাহায্যে শিশুকে সম্পূর্ণ নিরাময় করে তোলা সম্ভব।

খাবারে হেরফের : খাবারদাবারে সামান্য হেরফের হলেও শিশুর বমি হতে পারে এবং সব বয়সের শিশুর বমি হওয়ার এটাই অন্যতম কারণ। শিশুর বমির কারণ খুঁজতে গেলে অবশ্যই মা-বাবার কাছে তার শিশুকে খাওয়ানোর নিয়ম বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে। দেখা যায়, বেশিরভাগ সময়ে মা-বাবা শিশুকে এক-দুই ঘণ্টা পর পর কোনো না কোনো খাবার খেতে দেন। এত ঘন ঘন খাবার দেওয়ার কারণে শিশুর খিদে থাকে না। তবু মা তাকে জোর করে দুধ বা অন্য খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। অন্যদিকে শিশুকে অনেক দেরি করে খেতে দিলেও শিশুর বমি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেশি খিদে পাওয়ার কারণে শিশু একসঙ্গে হঠাৎ বেশি খেয়ে ফেলার পর বমি করে দিতে পারে।

কিছু অসুখ : কোনো নবজাতক হয়তো জন্মের প্রথম ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সম্পূর্ণ ভালো ছিল, বুকের দুধ নিজেই টেনে খেত। কিন্তু বর্তমানে বমি করছে এবং বুকের দুধ টেনে খাচ্ছে না বা একটু একটু টানছে বলে মনে হচ্ছে, তখন ধারণা করতে হবে হয়তো ওই নবজাতক কোনো ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের মেনিনজাইটিস অর্থাৎ মাথার আবরক ঝিল্লির প্রদাহ, এনকেফালাইটিস, ব্রেইন টিউমার, টনসিলাইটিস বা ফ্যারিনজাইটিস, কানপাকা রোগ, হুপিং কাশি, জন্ডিস, মূত্রনালির প্রদাহ, অ্যাপেন্ডিসাইটিস, পেটে নানা ধরনের কৃমি ইত্যাদি অসুখেও বমির মতো লক্ষণ দেখা যায়। কিছুটা বড় শিশুর ক্ষেত্রে পেপটিক আলসার, কিডনির অসুখ, ডায়াবেটিস কিটো এসিডোসিস, মাইগ্রেন, ভ্রমণের কারণে বমি হতে পারে।

প্রতিরোধ
যতদূর সম্ভব শিশুকে অসুস্থ লোকজনের কাছ থেকে দূরে রাখবেন।
শিশুকে হিমায়িত খাবার খাওয়াবেন না।
খাবার আগে এবং শৌচকাজের পরে শিশুকে ভালো করে হাত ধোয়া শেখান।

সর্বশেষ সংবাদ

রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তনেও সঙ্গে থাকার বার্তা জাপানের

রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে জাপান কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। রোববার (২৪...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ