রাশিয়ার ধনকুবের ব্যবসায়ী আর্কাদি রটেনবার্গ জানিয়েছেন, কৃষ্ণ সাগরে বিলাসবহুল এক অট্টালিকার মালিক আসলে তিনিই – প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নন।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ক্রেমলিন পন্থী ম্যাশ টেলিগ্রাম নামে একটি চ্যানেলে পোস্ট করা একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে রটেনবার্গ এই প্রাসাদ তার বলে বক্তব্য দিয়েছেন। এরপর এই খবর নিশ্চিত করে খবর প্রকাশ করেছে ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা।
রটেনবার্গকে উদ্ধৃত করে তার তথ্য দপ্তর জানায়, কয়েক বছর আগে এই অট্টালিকার সাথে জড়িত কিছু পাওনাদারের সাথে আমার একটি চুক্তি হয় এবং কয়েক বছর আগে এই সম্পত্তির মালিকানা আমার হাতে আসে।
রটেনবার্গ বলেন, আগামী ‘দুই বছরের মধ্যে’ এই সম্পত্তিটি তৈরির সব কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, এটি একটি অ্যাপার্টমেন্ট হোটেল হিসাবে তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে এ সপ্তাহের গোড়াতে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, তার প্রতিপক্ষ আলেক্সি নাভালনি তার প্রাসাদ দাবি করে যে বিলাসবহুল অট্টালিকার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছেন, সে প্রাসাদ কখনই তার নয়।
রটেনবার্গ এবং পুতিনের মধ্যে ব্যবসা ও বন্ধুত্বের কারণে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। রটেনবার্গ শনিবার প্রকাশ্যে দাবি করেছেন সেই প্রাসাদটির মালিক তিনি।
বিশাল এই প্রাসাদ নিয়ে সম্প্রতি চালানো এক তদন্তের খবর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় গত সপ্তাহে এবং দশ কোটি মানুষ ইতোমধ্যেই এই তদন্তের কেন্দ্রে থাকা প্রাসাদের ভিডিওটি দেখেছেন। ভিডিওতে অভিযোগ করা হয় কৃষ্ণ সাগরের তীরে এই প্রাসাদোপম অট্টালিকার অর্থায়ন করেছেন পুতিনের কোটিপতি বন্ধুরা। বলা হয় এই প্রাসাদে রয়েছে জুয়া খেলার ক্যাসিনো, বরফের ওপর স্কেটিং করার রিংক এবং আঙুরের ক্ষেত।
এই প্রাসাদ নিয়ে বিতর্ক কেন?
এ মাসের গোড়ায় ক্রেমলিনের সমালোচক এবং বর্তমানে কারারুদ্ধ রাশিয়ার বিরোধী রাজনীতিক আলেক্সি নাভালনি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করার পর থেকে এই সম্পত্তি নিয়ে রাশিয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে এই সম্পত্তির মূল্য ১.৩৭ বিলিয়ন বা একশ ৩৭ কোটি ডলার এবং এটির মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের ঘুষের অর্থ’ দিয়ে।
বিবিসির সাংবাদিক টিম হোয়েওয়েল এই রহস্যজনক প্রাসাদ নিয়ে প্রথম খবর প্রকাশ করেন ২০১২ সালে। ওই প্রতিবেদনে তিনি পুতিনের সাবেক একজন ব্যবসায়িক সহযোগীকে উদ্ধৃত করেন যিনি অভিযোগ করেছিলেন যে এই অট্টালিকা পুতিনের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তার সুনির্দিষ্ট মাপজোক এবং চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু সেসময় পুতিনের একজন মুখপাত্র এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এই প্রাসাদের মালিক তিনি বা তার পরিবারের কোন সদস্য নন বলে সরাসরি এই অভিযোগ নাকচ করে দেন। এবং তিনি ওই ভিডিওটিকে ‘একঘেঁয়ে’ বলে বর্ণনা করেন।
এই প্রাসাদ নিয়ে অভিযোগ ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকসহ রাশিয়ার সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত সপ্তাহান্তে নাভালনির সমর্থনে রাশিয়া জুড়ে যে বিক্ষোভ হয়েছে এই প্রাসাদের সাথে পুতিনের জড়িত থাকার অভিযোগ তাতে বড় ধরনের ইন্ধন জুগিয়েছে। বহু বছরের মধ্যে এটাই ছিল পুতিনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
আর্কাদি রটেনবার্গ কে?
রটেনবার্গ রাশিয়ায় বিশাল এক ব্যক্তিত্ব। সেতু এবং গ্যাস পাইপলাইনের মত অবকাঠামো নির্মাণের বিশাল এক সংস্থার মালিক তিনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি পুতিনের সাবেক একজন বন্ধু বলে জানা গেছে এবং এই রুশ ব্যবসায়ী এক সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জুডো খেলার সঙ্গী ছিলেন।
গত বছরের শেষ দিকে রটেনবার্গ এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে লন্ডনের বার্কলেস ব্যাংকের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার এবং নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে গোপনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রকাশ পায়।
এই রুশ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আমেরিকা ২০১৪ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তখন তাকে ‘রুশ নেতার ঘনিষ্ঠ মহলের’ একজন সদস্য হিসাবে বর্ণনা করেন আমেরিকান কর্মকর্তারা। তারা দাবি করেন যে পুতিনের ঘনিষ্ঠ এই মহল ‘পুতিনের প্রিয় প্রকল্পগুলো’ বাস্তবায়নে তাকে সাহায্য করছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা