নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মন্ত্রীপরিষদে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হিসেবে ড. জ্যানেট ইয়েলেনের মনোনয়নকে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ফাইন্যান্স কমিটি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে তিনি সিনেটে পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন পাবেন সহজেই। কিন্তু রিপাবলিকানরা তাকে অর্থনৈতিক নীতিগুলোতে উন্নয়নের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মনোনয়ন নিশ্চিত করতে আগামী সোমবার ভোট হবে সিনেটে। এই ভোটের বিষয়ে শুক্রবার সিনেটে ঘোষণা দেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট নেতা চাক শুমার। সিনেটে অনুমোদন পেলেই জ্যানেট ইয়েলেন হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী। তিনি নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনে অর্থনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে কাজ করবেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে আরো বলা হয়, শুক্রবার দিনের শেষের দিকে সিনেট ফাইন্যান্স কমিটিতে তার মনোনয়ন ইস্যুতে ভোট হয়। এতে জ্যানেট ইয়েলেনের পক্ষে পড়েছে ২৬ ভোট। বিপক্ষে কোনো ভোট পড়েনি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার নিয়োগ নিশ্চিত হলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে উচ্চাকাঙ্খী করোনা ভাইরাস বিষয়ক খরচ, অবকাঠামোগত বিনিয়োগ, আয়কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছেন তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রিপাবলিকান সিনেটর মাইক ক্রাপো। ভোটের পর তিনি বলেছেন, ড. ইয়েলেনের সঙ্গে তার বেশ কিছু অবস্থান সম্পর্কে আমার কড়া মতবিরোধ আছে। তবে তিনি আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন। তাই কমিটিতে রিপাবলিকানরা তাকে ভোট দিয়েছেন। এটা হলো আমাদের শক্তিশালী অবস্থান, যেটা বলে দেয় যে আমরা তার সঙ্গে কাজ করতে চাই।
উল্লেখ্য, শপথ নেয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের করোনা রিলিফ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। অবকাঠামো খাত, পরিবেশবান্ধব বিদ্যুত, শিক্ষা এবং মার্কিনিদের প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার গবেষণাকে সমৃদ্ধ করার জন্য ২ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। তার এসব খরচের খাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হবেন ড. ইয়েলেন। মঙ্গলবার তার মনোনয়ন নিয়ে সিনেট ফাইন্যান্স কমিটিতে শুনানি হয়েছে।
৭৪ বছর বয়সী জ্যানেট ইয়েলেন এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ছিলেন। অর্থনীতিবিদ হিসেবে তার রয়েছে খ্যাতি। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অর্থনীতি বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা ছিলেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সঙ্কট ও আর্থিক মন্দা কাটিয়ে উঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার ছিলেন। কর্মজীবীদের ওপর ব্যাংক পলিসির ক্ষতিকর প্রভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রে অসমভাবে খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে অধিক মনোযোগ দেয়ার জন্য তিনি মার্কিনিদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্রী হয়ে আছেন।
একটি ডাক্তার ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক পরিবারের কন্যা তিনি। বড় হয়েছেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এরপর ইয়েল থেকে সম্পন্ন করেন পিএইচডি। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার এবং সরকারের কাজ করা ছাড়াও তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন অধ্যাপনায়। তিনি বার্কলিতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় একজন প্রফেসর হিসেবে শিক্ষাদান করেছেন। বিয়ে করেছেন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জর্জ আকারলোফকে। ১৯৭০এর দশকে ফেডারেল রিজার্ভে একজন গবেষক হিসেবে কাজ করার সময় তার সঙ্গে ইয়েলের পরিচয় হয়। তাদের রয়েছে একটি পুত্র সন্তান। তিনিও অর্থনীতির একজন প্রফেসর। সূত্র : বিবিসি