ইফতার ও সাহরিতে খেজুর কেন খাবেন?

অবশ্যই পরুন

খেজুর শুধু সর্বোত্তম পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফলই নয় বরং শারীরিক জটিল ও কঠিন রোগের প্রতিরোধক এবং প্রতিষেধকও বটে। আবার খেজুর দিয়ে সাহরি ও ইফতার করা বরকত ও কল্যাণের। খেজুর বিহীন বাড়ির পরিবার যেন ক্ষুধার্ত পরিবার। সব সময় খেজুর খাওয়ায় রয়েছে অনেক উপকারিতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধিক বর্ণনায় খেজুরের অনেক গুণাগুণ ওঠে এসেছে।

কয়েকদিন পরেই শুরু হবে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এ মাসের নির্ধারিত দুইটি সময়ে ইফতার ও সাহরি গ্রহণ করতে হয়। আর তাতে খাদ্য হিসেবে খেজুর বরকত ও কল্যাণের। এতে প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য দ্বিগুণ বরকত ও কল্যাণ অর্জিত হয়। একটি সাহরি ও ইফতার গ্রহণ করা আর দ্বিতীয়টি হলো খেজুর দিয়ে সাহরি ও ইফতার গ্রহণ করা।

সাহরিতে খেজুর

সাহরি খাওয়া বরকতের। কিন্তু সাহরির নামে খাওয়া-দাওয়ার বিশাল আয়োজন কোনোভাবেই উচিত নয়। কেননা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে অলসতা তৈরি হয়। সাহরি রাতের শেষ প্রহরে খেতে হয়। হাদিসে এসেছে-

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনের শ্রেষ্ঠ সাহরি হলো খেজুর।’

– হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাহরি খাওয়ায় বরকত আসে। সুতরাং তোমরা তা (সাহরি) খেতে ছেড়ো না; যদিও তোমরা তাতে এক ঢোক পানিও খাও। কেননা যারা সাহরি খায়, তাদের জন্য আল্লাহ রহমত বর্ষন করেন এবং ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

ইফতারে খেজুর

সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াতাড়ি ইফতার করা উত্তম। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করার ফজিলতও বেশি। আর তা খেজুর দ্বারা করা সুন্নাত। খেজুর না পেলে সাদা পানি দ্বারা ইফতার শুরু করা। খেজুর দিয়ে ইফতার ও দ্রুত ইফতার করা প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে-

– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা তাতে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। আর যদি খেজুর পাওয়া না যায় তবে সে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মিশকাত)

সে কারণে সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করা উত্তম। খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতারের রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। খেজুর এবং পানি দিয়ে ইফতার করার ফলে মানুষের শরীরে সুক্রোজ তৈরি হয়। আর তাতে অল্প সময়ের মধ্যেই তৃষ্ণা এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর পানি দিয়ে ইফতার করেই যে দোয়া পড়তেন; তাতেও ইফতারের উপকারিতার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে-

– হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-

ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ

উচ্চারণ : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উরুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’

অর্থ : ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)

– হজরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারি, মুসলিম)

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইয়াহুদি ও নাসারাদের অভ্যাস হলো ইফতার দেরিতে করা। (আবু দাউদ)

এ ছাড়াও খেজুরে রয়েছে অনেক উপকারিতা। বিশেষ করে আজওয়া খেজুরের রয়েছে আশ্চর্যজনক গুণাগুণ। নিয়মিত এ খেজুর খেলে জাদু ও বিষক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকে মানুষ। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘোষণা দিয়েছেন-

হজরত সাদ ইবনে আবি ওক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি ও মুসলিম)

এ কারণেই মানুষের জন্য খেজুর একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে যেমন সুন্নাত আদায় হয় তেমনি শারীরিক বিভিন্ন চাহিদা পরিপূর্ণ হয়। মারাত্মক রোগ-ব্যধি, জাদু ও বিষক্রিয়া থেকেও মুক্ত থাকা যায়।

রমজানের ৩০ দিন ধারাবাহিক রোজা পালনের পরও খেজুর দ্বারা সাহরি ও ইফতার গ্রহণের ফলে মানুষ পায় শারীরিক শক্তি ও পুষ্টি। আত্ম-সংযম ও ইবাদত-বন্দেগিতে যোগ হয় নতুন মাত্রা। নতুন উদ্দম ও স্পৃহা। মনে হয় যেন, খেজুর খাওয়াও একটি ইবাদত।

মুমিন মুসলমানের উচিত, সামর্থ্য অনুযায়ী নিয়মিত খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখা। বিশেষ করে রমজানের সাহরি ও ইফতারে খেজুর রাখা। খেজুর দিয়ে সাহরি ও ইফতার গ্রহণের ফলে রোজাদার পাবে সুস্থ দেহ ও সবল মন। অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ঝরঝরে ও ফুরফুরে মেজাজে থাকবে মুমিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহরি ও ইফতারসহ সব সময় খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখার তাওফিক দান করুন। সাহরি ও ইফতারের পরিপূর্ণ বরকত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। শারীরিকভাবে সুস্থ ও সবল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। হাজার হাজার প্রতিবাদকারী দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানী ইসলামাবাদের...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ