ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ফুটবলারদের প্রতিবাদ ছিল শুরু থেকেই। তবে মাঠে পতাকা ওড়ানোর রীতিটা শুরু করেছিলেন লেস্টার সিটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা চৌধুরী। সে ধারায় এবার যোগ দিলেন পল পগবা। ম্যাচের ফলাফল হামজার মতো সুখকর না হলেও ফুলহ্যামের বিপক্ষে ১-১ ড্র করার পর তিনি মাঠে উড়িয়েছেন ফিলিস্তিনের পতাকা।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সেদিন ফিরেছিল দর্শক। করোনা মহামারির পর এই প্রথম দশ হাজার দর্শককে মাঠে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। শুরুতে এডিনসন কাভানির দুরন্ত গোলে এগিয়ে গেলেও এরপর রক্ষণের ভুলে গোল হজম করে ড্রয়ে বাধ্য হয় রেড ডেভিলরা। কিন্তু তাতে কি আর মানবতার ডাকে সাড়া দেওয়া বন্ধ থাকে? থাকেওনি।
ম্যাচ শেষ হতেই তাই ইউনাইটেডের দুই মুসলিম ফুটবলার পগবা আর আমাদ দিয়ালো ত্রায়োরেকে ‘ল্যাপ অফ অনার’ দিতে দেখা গেল ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে। এজন্যে অবশ্য কোনো প্রকারের জরিমানা বা শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে না দু’জনকে, জানাচ্ছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম। যেমনটা পড়তে হয়নি লেস্টারের হামজা চৌধুরী ও ওয়েসলি ফোফানাকেও।
ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা এফএ সূত্র ধরে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে কোনো ফুটবলারই জরিমানার মুখে পড়বেন না। একই বিষয় প্রযোজ্য প্রিমিয়ার লিগের ৩৭তম গেমউইকে ফেরা ১০০০০ সমর্থকের ক্ষেত্রেও।
পগবা ও দিয়ালোর পতাকা ওড়ানোর বিষয়টাকে ইউনাইটেড কোচ ওলে গুনার সোলশায়ারও দেখছেন বেশ সহজভাবেই। বললেন, ‘আমাদের দলে ভিন্ন পটভূমি, ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভিন্ন ভিন্ন দেশের খেলোয়াড় আছেন। আমার মনে হয় তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আমাদের সম্মান জানানো উচিত। ফুটবলের বাইরে আমার খেলোয়াড়রা যা ভাবে, তা যদি অন্যের চেয়ে ভিন্নও হয়, তাহলেও সেটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা উচিত।’
ফুটবলের বাইরের খেলোয়াড়দের ভাবনা-চিন্তার বিষয়ে বলতে গিয়ে রেড ডেভিল কোচ উদাহরণ দেন বিনামূল্যে শিশুদের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করা মার্কাস র্যাশফোর্ডের বিষয়টি। তিনি যোগ করেন, ‘আমার মতে, আমরা এর আগেও দেখেছি যে, খেলোয়াড়রা কিছু কিছু বিষয় বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখে। বলতে পারেন মার্কাস র্যাশফোর্ডের কথা, সে যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে তার কথা। ভিন্ন মত ধারণের অধিকারকে আমরা সম্মান জানাই।’
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দখলকে কেন্দ্র করে ১০ দিন ধরে সংঘাত চলছে ফিলিস্তিনের প্রভাবশালী দল হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সংঘাতে ইসরায়েলি সেনবাহিনীর বিমান হামলা ও আর্টিলারি গোলার আঘাতে এখন পর্যন্ত গাজায় মারা গেছেন ২১৮ জন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও নারী আছেন; আহত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি।
অন্যদিকে হামাসের ছোড়া রকেটে ইসরায়েলে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১২ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ৩০০ জন।
এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন ফুটবলার সংহতি জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রতি। লিভারপুল ফরোয়ার্ড মোহামেদ সালাহ, সাদিও মানে, ম্যানসিটি ফরোয়ার্ড রিয়াদ মাহরেজ, আর্সেনালের মোহামেদ এলনিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন ফিলিস্তিনের পক্ষে। বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে মুশফিকুর রহিমও মঙ্গলবার এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনের সঙ্গে।