ইসরায়েলি বাহিনী ও গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধ চলছে প্রায় দেড় মাস। সম্প্রতি মানবিক যুদ্ধবিরতিতে দুপক্ষ রাজি হলেও থেমে নেই হামলা-পাল্টা হামলা। এই যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর মোস্ট ওয়ান্টেড হামাস নেতার মধ্যে রয়েছে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নাম।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসসহ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অতর্কিত হামলার পিছনে মাস্টারমাইন্ড ছিলেন এই সিনওয়ার, দাবি ইসরায়েলের। হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের শীর্ষ কমান্ডার তিনি। আরেক শীর্ষ কমান্ডার হচ্ছেন মোহাম্মেদ দায়েফ। তাদেরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
গত কয়েক দশকের মধ্যে ইসরায়েলের মূলভূখণ্ডে চালানো সবচেয়ে ভয়াবহ এই হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে সম্প্রতি সিনওয়ারকে অভিযুক্ত করেছে তেলআবিব। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবরের হামলার পিছনে মাস্টারমাইন্ড এই ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
সেদিন ভোরে ইসরায়েলের কড়া নিরাপত্তা ভেদ করে আচমকাই অভিযান চালায় মুক্তিকামী ও প্রতিরোধ বাহিনী হামাস। ঘটনায় দেশটির এক হাজার ৪০০ নাগরিক নিহত হন। ইসরায়েলে আকস্মিক হামাস অভিযানের পর বারবার উঠে আসছে ৬১ বছর বয়সী ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নাম। বলা হচ্ছে, ইসরায়েলে গত কয়েক দশকের সবচেয়ে শক্তিশালী অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সোমবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়াহের পরেই সিনওয়ারের অবস্থান। স্বেচ্ছা নির্বাসনে থেকে হানিয়েহ সব পরিচালনা করায় গাজার প্রকৃত শাসক এই সিনওয়ার।
১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণকারী সিনওয়ার দক্ষিণ গাজার শরণার্থী শিবির অধ্যুষিত খান ইউনুস শহরে বড় হয়েছিলেন। তখন উপত্যকাটি মিসরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, সিনওয়ারের পরিবার আগে আশকেলনে বসতি স্থাপন করেছিল, কিন্তু ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল আশকেলনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর গাজায় চলে যেতে বাধ্য হন তারা। গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে সিনওয়ার আরবি স্ট্যাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। হিব্রু ভাষায় রয়েছে তার অনবদ্য দক্ষতা। যা ব্যবহার করে ইসরায়েলি বাহিনীর বিভিন্ন সাঙ্কেতিক চিহ্ন ও ভাষা বুঝে ফেলেন তিনি। এর এই কারণেই তাকে প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে তেলআবিবের জন্যে।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার প্রায় ২৪ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। ১৯৮২ সালে তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হন। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি ফিলিস্তিনি আন্দোলনের সময় সালাহ শেহাদের সঙ্গে যুক্ত হন। সালাহ শেহাদ সেসময় হামাসের কাসাম ব্রিগেডের নেতৃত্বে ছিলেন। ২০০২ সালে ইসরাইলি বাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে। ১৯৮৮ সালে সিনওয়ারকে দুই ইসরাইলি সৈন্য এবং চারজন ফিলিস্তিনিকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০০৬ সালে ভূগর্ভস্ত একটি সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ইসরায়েলের ভেতরে পড়ে হামাসের সামরিক শাখা ইজ আদ-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডের কিছু যোদ্ধা। তারা ইসরায়েলি বাহিনীর একটি চেকপোস্টে হামলা চালান এবং দুই সেনাকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় আহত হয় আরও বেশ কয়েকজন সেনা। সেই হামলার সময় গিলাদ শালিত নামে এক ইসরায়েলি সেনাকেও বন্দী করে নিয়ে আসেন হামাস যোদ্ধারা। এই গিলাদ শালিত প্রায় পাঁচ বছর হামাসের আস্তানায় বন্দী ছিলেন। পরে একটি বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে ২০১১ সালে মুক্তি দেয়া হয়।
মুক্তির পরই মূলত সিনওয়ারের উত্থান শুরু হয়। ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে নথিবদ্ধ হন তিনি। ২০১৭ সালে গাজায় হামাসের অন্যতম নেতা হন সিনওয়ার। হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়াহের পর সিনওয়ারের অবস্থান।