মাগরিবের নামাজ আদায় করার পর কিছু আমল করা যায়। যা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। মাগরিবের ৩ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার পর আপনি এসব আমল করতে পারবেন। এতে করে, আমাদের আমলনামায় আলাদা করে সাওয়াব যুক্ত হবে এবং আমরা এসব আমলের পরিবর্তে পরকালে অনেক উত্তম প্রতিদান পাবো।
তো চলুন, মাগরিবের নামাজের পর আমলগুলো কি কি জেনে নেয়া যাক-
সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহাদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু; লাহুল মুলকু; ওয়ালাহুল হামদু; ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির (১ বার)। এগুলো পাঠে গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (মুসলিম, হাদিস : ১২৪০)
ফরজ নামাজ আদায় করার পর জিকির করা বা বিভিন্ন তসবিহ পাঠ করতে দেখা যায় অনেককেই। আমরাও প্রতি ফরজ নামাজ আদায় করার পর এসব তসবিহ পড়লে আমাদের আমলনামায় অনেক বেশি সাওয়াব যুক্ত হবে। এছাড়াও, জিকির করলে আমাদের অন্তর শয়তানের থেকে সুরক্ষিত থাকবে। মাগরিবের নামাজ আদায় করার পর আমরা উপরোক্ত এসব তসবিহ পড়তে পারি।
এছাড়াও, মাগরিবের নামাজের পর আরও অনেক আমল করা যায়, যা মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন। তো চলুন, এসব আমল কী কী দেখে নেয়া যাক-
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম’ – এটি পরতেন । (মুসলিম, হাদিস : ১২২১)
- ‘আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার’ ৭ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। সে দিন বা সে রাতে মারা গেলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮০)
- সুরা ইখলাস, ফালাক্ব ও সুরা নাস, প্রত্যেকটি ৩ বার করে, ফজর ও মাগরিবের পর। রাসুল (সা.) বলেন, সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো পাঠ করলে তোমার আর কিছুরই দরকার হবে না।
- দরুদ শরিফ ১০ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। কেয়ামতের দিন রাসুল (সা.)-এর শাফাআত লাভ হবে।
- রাসুল সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার বলে,
«سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ» (সুব্হানাল্লা-হি ওয়াবিহামদিহি) তার পাপগুলো মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৫; মুসলিম, হাদিস : ২৬৯১) - রাসুল (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে ৩ বার আসতাগফিরুল্লাহ্ বলতেন। (মুসলিম, হাদিস : ১২২২)
মাগরিবের নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়
মাগরিবের নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয় অনেকেই জানেন না। মাগরিবের ৩ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার পর আমরা এমন কয়েকটি সূরা পড়তে পারি যা আমাদের জন্য নাজাতের উসিলা হয়ে যাবে। এছাড়াও, পরকালে এসব সূরা পড়ার বদৌলতে আমরা পাবো উত্তম প্রতিদান। তো চলুন মাগরিবের নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয় জেনে নেয়া যাক।
আয়াতুল কুরসি পাঠ করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ২৩৯৫)
আয়াতুল কুরসি (আরবি) :
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
উচ্চারণ : আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কায়্যূম, লা তা’খুযুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল্ আরদি, মান জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজিনহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাইয়িম্ মিন ইলিমহি ইল্লা বিমা শা-আ। ওয়াসিআ কুরসিয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা, ওয়ালা ইয়াঊদুহু হিফজুহুমা,ওয়াহুওয়াল আলিয়্যুল আজিম। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৫)
আয়াতুল কুরসি হচ্ছে কুরআন এর সবথেকে মর্যাদাময় আয়াত। এই আয়াতটি পাঠ করতে ১ মিনিটেরও কম সময় লাগবে। ফজরের নামাজের পর এই আয়াতটি পাঠ করলে আমাদের দিন শুরু হবে আল্লাহ্র রহমত এবং বরকতে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার পর আমরা একটি আয়াতটি পাঠ করতে পারি। এতে করে এক দিনে মাত্র ৫ মিনিট সময় ব্যয় হবে। ৫ মিনিট সময়ের জন্য পরকালে আমরা পাবো অনন্তকালের শান্তির জান্নাত।
মাগরিবের নামাজের পর সূরা ওয়াকিয়া পাঠ
মাগরিবের নামাজের পর বা রাতে সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসিরের কিতাবে অন্তিম রোগশয্যায় হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কথোপকথন এসেছে। হজরত উসমান (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করবে, সে কখনও উপবাস থাকবে না।’ -তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন : ৮/১০৬
সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করেছেন যে, ‘যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা নিম্নের ইস্তিগফারটি পড়ে এবং ওই দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৩০৬)
আরবি :
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানি, ওয়া আনা আব্দুকা, ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাতা’তু, আউজু বিকা মিন শাররি মা সানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগিফরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।