আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্প্রতি ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়েছে, যেখানে গুমের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) এই অধ্যাদেশটির গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত ৬ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এটিকে ‘ঐতিহাসিক’ অভিহিত করে জানান, আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে এটি তৈরি করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশ অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যদি কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার, আটক বা স্বাধীনতা হরণের পর তার অবস্থান বা পরিণতি গোপন রাখেন এবং এ কারণে ওই ব্যক্তি আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন, তবে তা শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ (গুম) হিসেবে গণ্য হবে। এই ধরনের অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
অধ্যাদেশটির কঠোরতম বিধান হলো, গুম হওয়া ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে বা পাঁচ বছর পরেও তাকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব না হলে, দায়ী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গুমের আদেশ বা অনুমতি দেওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সমান সাজার বিধানের আওতায় থাকবেন এবং গুমের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হলেও তিনি মূল অপরাধের সমান দণ্ডপ্রাপ্ত হবেন; এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা অন্য কোনো অজুহাত কার্যকর হবে না।
এমনকি, যদি কোনো ব্যক্তি সজ্ঞানে গুমের সাক্ষ্য-প্রমাণ গোপন, বিকৃত বা নষ্ট করেন অথবা গুমের উদ্দেশ্যে গোপন আটককেন্দ্র নির্মাণ বা ব্যবহার করেন, তাহলে তার সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে। এই অধ্যাদেশের অধীনে অপরাধগুলো জামিন ও আপস অযোগ্য বিবেচিত হবে এবং অভিযুক্ত পলাতক থাকলেও বিচার সম্পন্ন করা যাবে। সুষ্ঠু বিচারের জন্য জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথাও এতে বলা হয়েছে।
প্রেসসচিব শফিকুল আলমের তথ্যমতে, গুম কমিশনে প্রায় দুই হাজার অভিযোগ এসেছে, তবে গুমের সংখ্যা চার হাজারের মতো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

