আমরা অনেক জ্ঞান অর্জন করি, কিন্তু সেই জ্ঞান নিয়ে কেউই নিরাপদ না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। আসলে হিদায়েত এবং জ্ঞান এক নয়। হিদায়েত ছাড়া জ্ঞানও মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে। এমনকি বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বড় বড় আলেমদের সান্নিধ্য, অনেক অধ্যয়ন, সব মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে। এর থেকে তৃতীয় বিশ্বে বসবাসকারী একজন দ্বীনদার দরিদ্র দিন-মজুরের জীবনও উত্তম হতে পারে।
আগের যুগের অনেক বিখ্যাত আলেমের কথা শুনেছি, যারা আগে একরকম বলেছেন, পরে মত পরিবর্তন করেছেন। মৃত্যুর আগে বুখারী, মুসলিম বুকে নিয়ে কেঁদেছেন পূর্বের কর্মকাণ্ডের জন্য। এই ঘটনাগুলো শুনলে মনে হতো- এত বড় আলেম তা কিভাবে করতে পারেন?
আজকের এই পরিস্কার বৈপরিত্য একদিনে ঘটেনি এবং একদিনেই সকলের কাছে সবকিছু পরিস্কার হয়নি। শুরুটা হয়তো হয়েছিল ছোট ছোট বিচ্যুতির মধ্য দিয়ে অথবা একটি দু’টি বিচ্যুতির মধ্য দিয়ে। যেগুলো ছোট খাটো মনে করা হয়েছিলো। আজ সেগুলোর পরিণতি এত ভয়ঙ্করভাবে সামনে চলে আসছে। আসলে কোন সুন্নাহ, বিধানই ছোট খাটো নয়। কোন কারণে সুন্নাহ পালন করতে আমরা অপারগ হতে পারি, কিন্তু মনে অপরাধবোধ থাকা উচিৎ এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত। কখনোই নিজের সুবিধার্থে ভুল ব্যাখ্যার চোরা রাস্তা খোঁজা উচিত নয়।
এত স্পষ্ট বিচ্যুতি, এত জ্ঞানী মানুষের চোখে ধরা পড়ছে না! না জানি আমাদের নিজেদের কত ভুল আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি। যার পরিনতিও ভয়াবহ হতে পারে। আল্লাহ আমাদের ভুলগুলো বোঝার এবং দুনিয়াতেই শুধরে নেবার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের নিজেদের কৃতকর্মের খারাপ পরিণতি থেকে আমাদের হিফাজত করুন।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “তিনটি বিষয় মানুষকে ধ্বংস করে দেয়- নিজ প্রবৃত্তির আনুগত্য, অব্যাহত কৃপণতা, নিজের ব্যাপারে সু-ধারণা পোষণ বা আত্মতৃপ্তি। আর শেষেরটি এ তিনটির মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ।” [বায়হাক্বী, মিশকাত-৫১২২, আলবানীর মতে হাসান।]
শিরক ও বিদ’আত
আপনি সারা জীবন অনেক ইবাদত করেছেন। গুনাহ তেমন করেন নাই। এতো বেশি ইবাদত করেছেন যে, ভাবছেন ফেরেশতারা আপনার জন্য কবরে ফুলের বিছানা বিছিয়ে রাখবে। কিন্তু মরার পর কবরে গিয়ে দেখলেন ফেরেশতারা হাতে মুগুর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি তো অবাক! বললেন, আমি সারা জীবন এতো এতো ইবাদত করলাম, আর তার পরিবর্তে এসব কি?
ফেরেশতারা বলবে, সারা জীবন যা করেছ সব শিরক আর বিদ’আত! আপনি বলবেন, আমি তো সব ‘বড় হুজুরের’ কথা মতোই করেছি! তাহলে ভুল কেন হবে? ফেরেশতারা বলবে, তুমি বড় হুজুরের কথা যাচাই কর নাই। সে সত্য বলেছে না মিথ্যা বলেছে, ভুল বলেছে না সঠিক বলেছে!
আপনি বলবেন, তাহলে আমাকে আর একবার সুযোগ দেয়া হোক। জীবন দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হোক, আমি যাচাই বাছাই করে সঠিক ইবাদত করে আসব। তখন ফেরেশতারা আপনাকে ছেড়ে দিবে! আপনি আবার পৃথিবীতে এসে ভাল কাজ করে যাবেন? মোটেও তা নয়।
জীবন একটাই, সুযোগ একবারই। একটু যাচাই বাছাই করে ইবাদত করেন। অর্থসহ কুরআন-হাদীস পড়েন। কুরআন-হাদীস একটু পড়লেই আপনি আলেম বা মুফতি হয়তো হবেন না। কিন্তু অন্তত এতোটুকু শিখবেন, কোন আলেম ভুল বা মিথ্যা বলে আর কোন আলেম সঠিক বলে।
এখন যা দেখছি তা-ই শেষ কথা নয়, আজকে যাকে সফল মনে হচ্ছে, পরিণতিতে সে বিফলও হয়ে যেতে পারে, আমিও হতে পারি। তবে মৃত্যু পর্যন্ত ঈমান, হিদায়েতের উপর টিকে থাকাই সফলতা। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার কাছে তাই-ই প্রার্থনা করছি।