হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি ধনকুবের জিমি লাইকে ১২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে হংকংয়ের চীনা কর্তৃপক্ষ। অননুমোদিত সভা করায় তাকে এই শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর হংকংয়ে ‘মিডিয়া মোগল’ হিসেবে পরিচিত জিমি লাইকে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীন অভিযুক্ত করা হয়। হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থি কর্মীদের ওপর চীনের দমন অভিযান চলার মধ্যে তাকে কারাদণ্ড প্রদানের ঘটনা ঘটল।
ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজের খবরে বলা হয়, ২০১৯ সালে গণতন্ত্রের পক্ষে শোভাযাত্রা করায় জিমি লাইকে অভিযুক্ত করা হয়। ৭৩ বছর বয়সী বেইজিংয়ের কট্টর সমালোচক জিমি লাই হংকংভিত্তিক গণমাধ্যম অ্যাপল ডেইলির প্রতিষ্ঠা।
গত বছরের আগস্টে লাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে তার মালিকানাধীন গণতন্ত্রের সমর্থক ট্যাবলয়েড পত্রিকা অ্যাপল ডেইলির কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় প্রায় ২০০ পুলিশ। জব্দ করে নথিপত্র ভর্তি বেশকিছু বাক্স।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে নিজ বাসা থেকে সিএনএনের সঙ্গে আলাপকালে লাই বলেছিলেন, আমি বছরের পর বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। এই লড়াই আমি শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাব। কেননা, স্বাধীনতা ছাড়া একজনের কাছে কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকার নয়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে পৃথক কয়েকটি অভিযোগে লাই তার গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে জামিন আবেদন করেন। তবে তা নাকচ করে দেন হংকংয়ের আদালত।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট গণতন্ত্রের পক্ষে মিছিলে অংশ গ্রহণ করায় নয়জন গণতন্ত্রকর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ৩১ আগস্ট মিছিল করায় আরও তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে জিমি লাইয়ের সংবাদপত্র অ্যাপল ডেইলি কারাগারে বসে লেখা একটি চিঠি প্রকাশ করে। সেখানে এতে বলা হয়, সাংবাদিক হিসেবে আমাদের ন্যায়বিচার চাওয়ার অধিকার রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা অন্যায্য প্রলোভন দ্বারা প্রলুব্ধ না হই, অশুভ পথে চালিত না হই; ততক্ষণ আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি।
জিমি লাই চীনের মূলভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন কিন্তু শিশু বয়সেই অবৈধভাবে হংকংয়ে চলে আসেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ শুনানির আগে বিবিসি নিউজের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাতকারে জিমি লাই জানান, জেল হলেও তিনি অর্থপূর্ণ জীবন-যাপন করতে চান।
তিনি আরও বলেন, আমি এখানে এক ডলার নিয়ে এসেছিলাম। এই স্থানের বদৌলতে আমি সব কিছু পেয়েছি। এখন আমার ঋণ পরিশোধের সময়।
জিমি লাইয়ের বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুইটি নতুন নিরাপত্তা আইনের অধীনে। এই আইনে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন জেলের বিধান রয়েছে। গত বছর চীন হংকংয়ে এই আইন প্রণয়ন করে। চীন সমর্থিত হংকংয়ের সরকার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছে, শহরটিতে শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনটির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।