তাইওয়ানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আমেরিকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীন। বাইডেনকে সতর্ক করে দিয়ে দেশটি বলেছে, ‘বাইডেন আগুন নিয়ে খেলছেন।’ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন যে, তাইওয়ান প্রশ্নে চীন কোনও প্রকার আপোস করবে না বা ছাড় দেবে না। গেল রবিবার চীনের আনুষ্ঠানিক আইনসভার বার্ষিক বৈঠকের সময় একটি সংবাদ বিবৃতিতে ওয়াং একথা বলেন।
ওয়াং তাইওয়ান সম্পর্কে বলেন যে, অঞ্চলটি তার দেশের একটি অলঙ্ঘ্যনীয় রেড লাইন। ‘এক চীন’ নীতির অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল তাইওয়ানের প্রতি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থন প্রদর্শনকে ‘বিপজ্জনক অনুশীলন’ অভিহিত করে বাইডেন প্রশাসনকে তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বাইডেনকে তার পূর্ববর্তী প্রশাসনের করা সীমা লঙ্ঘন এবং আগুনের সাথে খেলার বিপজ্জনক পাঁয়তারাগুলি সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগের জন্য আহ্বান জানিয়েছে তিনি আরও বলেন, ‘চীন সরকারের কাছে তাইওয়ান ইস্যুতে আপস বা ছাড়ের কোন সুযোগ নেই। আমরা নতুন মার্কিন প্রশাসনের কাছে তাইওয়ান ইস্যুটিকে উচ্চ সংবেদনশীলতার সাথে সম্পূর্ণরূপে বুঝতে অনুরোধ করছি।’
এর আগে, যদিও বাইডেন বলেছিলেন যে তিনি মার্কিন-চীন সম্পর্কের উন্নতি করতে চান, তবে তিনি বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং মানবাধিকারের উপর চাপ শিথিল করবেন বলে কোনও ইঙ্গিত দেননি। ফলে চীন আমেরিকার মধ্যকার তিক্ত সম্পর্কটি ৩য় বিশ্বদ্ধের মতো আরও বিপজ্জনক দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কার স্কুল অফ পলিসি এবং গভর্নমেন্টের সহকারী অধ্যাপক কেতিয়ান জাং এই বিষয়ে চীনের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বলব যে ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনা আরও বেড়েছে, এবং আন্ত:সম্পর্কীয় সম্পর্কের অবনতি একটি ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া।’ তিনি বলেন, ‘চীনের একটি রেড লাইন রয়েছে, যা বলে যে তাইওয়ানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা উচিত নয়।’ কেতিয়ান আরও বলেন, ‘যদি তারা এটি করে, তবে খুব সম্ভবত চীন শক্তি প্রয়োগের পথ বেছে নেবে।’
আরএএনডি কর্পোরেশনের সিনিয়র প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এবং চীন বিশেষজ্ঞ ডেরেক গ্রসম্যান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘কেবলমাত্র ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের (তিনি ১৯৯২ সালের ঐমত্যের ‘এক চীন’ নীতি সমর্থন করেন না) জয়লাভের কারণেই নয়, পাশাপাশি, বেইজিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে ওয়াশিংটন এক চীন নীতিমালাকে লঙ্ঘন করে ট্রাম্প প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বীপে প্রেরণ করায় উত্তেজনা বেড়ে চলেছে।
গ্রসম্যান বলেন, ‘আমার প্রধান আশঙ্কা হ›ল যে, যেহেতু মার্কিন-চীন দ্ব›দ্ব অব্যাহত রয়েছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটি সম্ভবত তার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বেইজিং মনে করবে যে ওয়াশিংটন আসলে চীনকে শায়েস্তা করার জন্য তাইওয়ানকে ব্যবহার করবে এবং সেকারণে প্রতিকূল প্রবণতাটি প্রতিরোধ করতে তার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
সূত্র : এক্সপ্রেস।