প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন জর্জ ডব্লিউ বুশপন্থী নেতারা রিপাবলিকান পার্টি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছেন। রিপাবলিকান দলকে ‘ট্রাম্প বন্দনার সংঘ’ বলে উল্লেখ করেছেন বুশ প্রশাসনের সাবেক এক প্রতিমন্ত্রী জিমি গুরুলে।
নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের মিথ্যা দাবির প্রেক্ষিতে গত মাসে ইউএস ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকরা যে দাঙ্গার সৃষ্টি করে, এরপরেও নির্বাচিত রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে সমর্থন করা ত্যাগ করতে পারেনি। সেই ক্ষোভ থেকেই ওই নেতারা এরকম সিদ্ধান্ত নিতে চান।
এসব নেতাদের অনেকেই বুশের প্রশাসনে বেশ বড় পদে ছিলেন। তারা আশা করেছিলেন, নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়ের ফলে দলের নেতারা ট্রাম্পের সমর্থন থেকে সরে আসবেন এবং গত নভেম্বরে ট্রাম্পের নির্বাচনে চুরি সম্পর্কিত দাবির নিন্দাও করবেন।
কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা অব্যাহতভাবে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। সাবেক এই কর্মকর্তাদের মতে, দলটি এত বেশি বদলে গেছে তারা এখন আর কাউকেই চিনতে পারেন না। তাদের কেউ কেউ সদস্যপদ ছেড়ে দিয়েছেন আর কেউ কেউ দল ‘পথভ্রষ্ট’ হয়েছে বলে মনে করছেন। আবার কেউ দলীয় বলয়ে ছেড়ে তৃণমূল পর্যায়ে স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবেও যোগ দিচ্ছেন অনেকে।
বুশের সময়ে হোয়াইট হাউজের কম্যিনিকেশন্স অফিসে ছয় বছর ধরে কাজ করা ক্রিস্টোফার পিউর্সেল জানান, রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান, এমন নেতার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এত বছর ধরে দলের হয়ে কাজ করার পরেও এখন এই নেতাদের দলত্যাগের ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, কীভাবে ট্রাম্পকে ঘিরে দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা দলীয় ঐক্যে প্রভাব ফেলছে।
সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দলটির চেয়ারম্যান রনা ম্যাকড্যানিয়েল বলেন, তারা খুব শীঘ্রই সবাই এক হয়ে কাজ করতে নামবেন। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে নেওয়া এজেন্ডা বাস্তবায়নে তারা মাঠে নামবেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ অবশ্য এই ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। ট্রাম্প শাসনের সময়েই তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা পরিষ্কার জানিয়ে দেন।
জঘন্য ঘটনা!
ক্যাপিটল ঘেরাও এর কয়েক ঘন্টা পরই রিপাবলিকান পার্টির আট সিনেটরসহ ১৩৯ জন হাউজ রিপ্রেজেন্টেটিভ নির্বাচনের সনদ প্রদান বন্ধ রাখার পক্ষে ভোট দেয়।
বেশিরভাগ রিপাবলিকান সিনেটরও জানিয়েছেন, তারা ট্রাম্পের অভিশংসন মানবেন না। ট্রাম্পকে সিনেট ট্রায়ালে অপরাধী ঘোষণা করার ব্যাপারটিও তারা প্রায় দুরূহ করে তুলেছিলেন।
‘বিদ্রোহের উস্কানি’ দেওয়ার দায়ে গত জানুয়ারির ১৩ তারিখে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে ডেমোক্রেটরা। ট্রাম্পই একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি কংগ্রেস দ্বারা দুইবার অভিশংসিত হয়েছেন।
বুশের অধীনে কাজ করতেন এমন এক সাবেক ট্রেজারার রোজারিও মারিন রয়টার্সকে বলেন, “যদি এমন চলতেই থাকে এবং এটি শুধুমাত্র ট্রাম্পের দল হয়ে দাঁড়ায়; তাহলে আমাদের অনেকেই আর সেখানে ফিরে যাবে না। সিনেট যদি তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ‘ট্রাম্প’ নামক ক্যান্সার দূর না করলে; আমরা আর কোন রিপাবলিকান প্রার্থীকে ভোটও দেব না।”
তবে দ্বিমত পোষণ করে বুশের অধীনস্ত সাবেক দুই কর্মকর্তা বলেন, তাদের বিশ্বাস ট্রাম্পের প্রভাব থেকে দলকে মুক্ত করতে হলে তাদের দলে থাকা প্রয়োজন।
এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন সুজি ডিফ্রান্সিস, যিনি বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন এবং তার মতে দলের মধ্যকার কোন্দল শুধুই ডেমোক্রেটদের উপকৃত করবে।
সুজির মতে সরকারি সীমাবদ্ধতা, ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ, মুক্ত বাণিজ্য ও জাতীয় প্রতিরক্ষার মতো নানাবিধ কারণে রিপাবলিকান পার্টির পক্ষে বর্তমানে সংগঠিত হওয়া বেশ কঠিন।
সূত্র: রয়টার্স