spot_img

বিশ্বনবী ছাড়া যে বিশেষ মর্যাদা অন্য কোনো নবীদের দেয়া হয়নি

অবশ্যই পরুন

আখেরে জামানার সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি সকল নবীদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ নবী। প্রিয় নবী এমন বিশেষ ৫টি বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন, যা আগের কোনো নবী-রাসুলদের দেয়া হয়নি। এ বৈশিষ্ট্য ও গুণগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে শুধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য বিশেষ তোহফা। হাদিসে পাকে প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বর্ণনা করেছেন-

হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে, যা আমার আগে অন্য কোনো নবীদের দেয়া হয়নি। তাহলো-

– আমাকে এমন প্রভাব (প্রখর ব্যক্তিত্ব) দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে, এক মাস দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়।
– পুরো জমিনকে আমার জন্য নামাজ আদায়ের স্থান এবং পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। সুতরাং আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে ইচ্ছা নামাজের সময় হলে, যেন (সেখানেই) নামাজ পড়ে নেয়।
– আমার জন্য (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) গনিমত বৈধ করা হয়েছে; যা এর আগে কারো জন্য হালাল ছিল না।
– আমাকে (ব্যাপক) সুপারিশের অধিকার দেয়া হয়েছে।
– আমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য (রহমতস্বরূপ) পাঠানো হয়েছে; যেখানে আগের সব নবীকে তাঁদের স্বজাতি ও গোত্রের জন্য পাঠানো হয়েছিলে।’ (বুখারি)

তবে আগের সব নবী-রাসুলগণই ছিলেন নিজ নিজ গোত্র ও জাতির মানুষের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তাদের আদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণকারীরাও মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের পথের অনুসরণ ও অনুকরণের উপদেশ দিয়েছেন-
‘তাদেরকেই আল্লাহ সৎ পথে পরিচালিত করেছেন। ফলে আপনি তাদের পথের অনুসরণ করুন।’ (সূরা আনআম: আয়াত ৯০)

এ আয়াতের আলোকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, আগের সব নবী-রাসুলদের সব কল্যাণ ও পূর্ণতার ধারক হলেন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশেষ ৫ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো-

বিশেষ ক্ষমতা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা এম শক্তি দান করেছেন যে, মুমিনরা তার সান্নিধ্যে আসলে প্রশান্তি লাভ করতেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করল। তাদের অন্তরে যা ছিল তিনি তা অবগত ছিলেন। তাদের তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদের পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়।’ (সূরা ফাতাহ: আয়াত ১৮)

বিপরীতে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন একটি বিশেষ সাহায্য লাভ করেছিলেন, যার ফলে ইসলামের শত্রুরা তাঁর মুখোমুখি হওয়াকে চরম ভয় করতো। আল্লাহ তাআলা বিষয়টি এভাবে কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন-
‘আমি অবিশ্বাসীদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করব, যেহেতু তারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করেছে, যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোনো সনদ পাঠাননি।’ (সূরা আল-ইমরান: আয়াত ১৫১)

ইবাদতের বিশেষ সুযোগ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য আল্লাহ তাআলা পুরো পৃথিবীকে ইবাদতের জন্য কবুল করে নিয়েছন। আবার এ জমিনের মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম করেছেন।
মুমিন মুসলমান চাইলে, যে কোনো স্থানেই নামাজ আদায় করতে পারবেন। যদি কোথাও পানি পাওয়া না যায় তবে চাইলে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করেও নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করতে পারবে মুমিন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কোরো; তা দিয়ে তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও দুই হাত মাসাহ করো।’ (সূরা মায়েদা: আয়াত ৬)

গণিমতের সম্পদ গ্রহণের বৈধতা

আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মদিকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ভোগ করার অধিকার দিয়েছেন। যাতে রয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকার প্রশান্তি। এগুলো আগের কোনো নবী-রাসুলদের উম্মতের জন্য বৈধ ছিল না। তবে এ সব সম্পদ গ্রহণের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণের সওয়াব বা প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হবে না মুমিন।

শাফায়াতের অধিকার

যখন কোনো নবী-রাসুল কারও ব্যাপারে সুপারিশ করতে ব্যর্থ হবে, তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য সুপারিশ লাভের অধিকার পাবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেয়ামতের দিন সব সৃষ্টির জন্য সুপারিশ করবেন এবং এ কাজের মাধ্যমে তিনি প্রতিশ্রুত ‘মাকামে মাহমুদ’ (সম্মানিত স্থান) অর্জন করবেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীর জন্য বিশেষ একটি দোয়ার অধিকার আছে, যা কবুল করা হবে। প্রত্যেক নবীই তাঁর দোয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করেছেন (দুনিয়াতেই তা চেয়েছেন)। আর আমি আমার সে দোয়া কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফায়াতের জন্য মুলতবি রেখেছি। আমার উম্মতের যে ব্যক্তি শিরক না করে মারা যাবে, ইনশাআল্লাহ! সে তা লাভ করবে।’ (বুখারি)

বিশ্ববাসীর জন্য রহমত

আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া: আয়াত ১০৭)
তিনি শুধু রহমত স্বরূপই নয়, বরং তিনি ছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা জানে না।’ (সূরা সাবা: আয়াত ২৮)

বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য হোক উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য সর্বোচ্চ অনুপ্রেরণা। দুনিয়ার সফলতা ও পরকালের নাজাতের একমাত্র উপায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ ও সালাম পাঠানোর তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের মুক্তিতে তাঁরই আদর্শ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ সংবাদ

কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না নয়: আইজিপি

পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দায়ের করা মামলাসমূহ যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ