কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পাটবীজের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীল না থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। দেশে পাটবীজ উৎপাদনের মূল সমস্যা হলো অন্য ফসলের তুলনায় কম লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা চাষ করতে চায় না। পাটবীজে কৃষকদের আগ্রহী করতে ও কৃষকেরা যাতে চাষ করে লাভবান হয় সেজন্য প্রণোদনা বা ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া, পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে ‘একটি সমন্বিত প্রকল্প’ গ্রহণের কাজ চলছে।
কৃষিমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার ‘পাটবীজের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের অগ্রগতি পর্যালোচনার’ ভার্চুয়াল সভায় এ কথা বলেন।
সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। এতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মো. মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মো. রুহুল আমিন তালুকদার, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) হাসানুজ্জামান কল্লোল, মহাপরিচালক (বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা ও সংস্থাপ্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উদ্যোগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছে। সেই জিনোম ব্যবহার করে দেশের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল পাটের জাত উদ্ভাবন করেছে; যার ফলন ভারতের পাটজাতের চেয়ে অনেক বেশি। কৃষক পর্যায়ে এসব জাতের চাষ জনপ্রিয় করতে পারলে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব। সেজন্য, এসব দেশিয় জাত দ্রুত জনপ্রিয় করতে সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
মন্ত্রী এসময় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, সম্প্রসারণকর্মী ও বিজ্ঞানীদেরকে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য রোডম্যাপ বাস্তবায়নে দ্রুততার সাথে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, পাটবীজ চাষের জন্য জমির স্বল্পতা রয়েছে। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত সুগার মিলের জমি পাটবীজের উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ বিষয়েও উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সভায় জানান হয়, দেশে বর্তমানে উৎপাদিত পাটের ৮৫ ভাগই তোষা জাতের পাট। এ পাটবীজের চাহিদার প্রায় ৮৫-৯০ ভাগ ভারত থেকে আনতে হয়। এই বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ৫ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ এই ৫ বছরের মধ্যে দেশে ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাটবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, উচ্চমূল্যের রবি ফসলের পরিবর্তে কৃষক পাটবীজ উৎপাদনে তেমন আগ্রহী হয় না। হিসেব করে দেখা গেছে, তোষা পাটবীজ চাষ করে একর প্রতি কৃষকের নীট লাভ ৪৮ হাজার টাকা, যেখানে ফুলকপি চাষে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, বাধাকপি চাষে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নীট লাভ হয়। তাই পাটবীজ উৎপাদনের পরিবর্তে পাট চাষের সময় কৃষক বাজার থেকে বীজ ক্রয় করে পাট চাষ করা লাভজনক বলে মনে করে।