সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী কোনো বিক্ষোভে বিউটি কুইনের সরব অবস্থান সত্যিই আশ্চর্যের। সেই অবাক করা কাজও ঘটল মিয়ানমার নিয়ে। দেশটির অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে সক্রিয় অবস্থানে সুন্দরী প্রতিযোগী হান লে। এ কারণে বিবিসিও বলছে, জাঁকজমকপূর্ণ বিউটি প্রতিযোগীদের বক্তৃতা খুব কমই শিরোনাম হয়; যেটা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, বিষয়টি বিরল হলেও মিস গ্র্যান্ড মিয়ানমার হান লে কথা বলেছেন সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে। হান লে যখন গত সপ্তাহে তার দেশের সামরিক বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছিলেন, তখন তার কথায় মাথা ঘুরে যায়!
তাও সাধারণ কোনো অনুষ্ঠানে নয়, থাইল্যান্ডের মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল-২০২০; আন্তর্জাতিক একটি অনুষ্ঠানমঞ্চে তিনি প্রতিবাদের সুর স্পষ্ট করেছেন। হান লে বলেন, আজ আমার দেশ মিয়ানমারে… অনেক লোক মারা যাচ্ছেন। দয়া করে মিয়ানমারকে সহায়তা করুন। আমাদের এখনই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি।
প্রতিবেদন বলছে, বিউটি কুইন হান লে শুধু মঞ্চই গরম করেননি প্রতিবাদে; সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শুরুতেও তিনি বিক্ষোভ করেছেন। মাসখানেক আগে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন ২২ বছর বয়সী এ নারী।
প্রায় দুই মাস আগে মিয়ানমারে সহিংসতা শুরু হয়েছিল। দেশটির সেনাবাহিনী একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে শাসনক্ষমতা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। অথচ অং সান সুচির দল জাতীয় লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দল নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেছিল।
এরপর দেশজুড়ে শুরু হয় সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ। প্রতিবাদে হাজার হাজার জনতা রাস্তায় নেমে পড়েন। একপর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করে জলকামান ব্যবহার। রাবার বুলেট প্রয়োগও শুরু হয়। তাতেও কিচ্ছু করতে না পেরে বিক্ষোভের এক সপ্তাহ পর সরাসরি গুলি চালাতে শুরু করে মিয়ানমার জান্তারা।
দুই মাস ধরে এই সহিংসতার সবচেয়ে রক্তাক্ত দিনটি ছিল গত সপ্তাহের শনিবার। এ দিন ১১৪ জন নাগরিককে গুলি করে হত্যা করেছিল জান্তারা। একটি স্থানীয় পর্যবেক্ষণ গোষ্ঠী জানিয়েছে, ওইদিনের ঘটনা নিয়ে এ পর্যন্ত ৫০০ এর বেশি মানুষ মারা গেছেন মিয়ানমার জান্তাদের গুলিতে। এরমধ্যে ৪৩ জন শিশু রয়েছে; সেভ দ্য চিলেড্রেন্সের মতে।
হান লে ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। তিনি নিজের জন্মভূমি সম্পর্কে কথা বলতে কৌশলে অন্তর্জাতিক মঞ্চ বেছে নিয়েছেন। এমন একটি প্রতিযোগিতা মঞ্চ বেছে নেওয়ায় তাকে নিয়ে বড় করে শিরোনামও করছে সংবাদমাধ্যমগুলো। প্রশংসায় ভাসছে তার পদক্ষেপও।
ব্যাংকক থেকে বিবিসির সঙ্গে ফোনে আলাপকালে হান লে বলেন, মিয়ানমারে সাংবাদিকদের আটকে রাখা হচ্ছে… তারা কিছু করতে পারছেন না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই মঞ্চে কথা বলার।
আন্তর্জাতিক মঞ্চ কাঁপিয়ে নিজের দুই মিনিটের বক্তব্য তাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর রাডারের মুখোমুখি হতে পারেন ভেবে তিনি খুব উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছে বিবিসি। তাই হান লে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আগামী অন্তত তিন মাস তিনি থাইল্যান্ডেই অবস্থান করবেন।
হান লে বলেন, আমি থাইল্যান্ডে আসার আগে জানতাম না, নিজেকে এভাবে সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলব। এখন কিছুদিন এখানেই থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমি আমার পরিবার ও আমার নিরাপত্তা নিয়ে খুব চিন্তিত। কারণ আমি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছি। সবাই জানে মিয়ানমারে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে কথা বলার সীমাও রয়েছে। এরইমধ্যে আমার বন্ধুরা আমাকে মিয়ানমারে ফিরে না যেতে বলেছে।
বিবিসি বলছে, তার ভয় ভিত্তিহীন নয়। কারণ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মিয়ানমারে জান্তা শাসনের বিরোধিতা করায় প্রায় ৪০ জন সেলিব্রেটির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই দলে সংগীতশিল্পী, মডেল, সাংবাদিক ও সামাজিক মাধ্যম তারকারাও রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর মধ্যে মতবিরোধ প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।