যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আর কোন বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখবে না বলে জানিয়েছে জার্মানির ডয়েচে ব্যাংক। গলফ কোর্স এবং হোটেলের মত বহু ব্যবসায়িক উদ্যোগে ঋণের বড় উৎস হিসেবে ট্রাম্পের পাশে ছিল এই জার্মান ব্যাংক।
জার্মানির বৃহত্তম এই ব্যাংক ট্রাম্প ও তার কোম্পানিগুলোর সাথে ভবিষ্যতে কোনপ্রকার ব্যবসায় যাওয়া থেকে বিরত থাকবে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা। তবে গ্রাহকের সাথে সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষার নীতিমালার অনুযায়ী, ডয়েচে ব্যাংকের মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
ক্যাপিটলের হামলায় ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক মহলে ট্রাম্পকে যে ক্ষতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তারই সর্বশেষ সংযোজন ট্রাম্পের সাথে জার্মান ব্যাংকটির এই সম্পর্কচ্ছেদ।
গত সোমবার মার্কিন সিগনেচার ব্যাংকও জানায়, তারা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের ডাক দিয়েছে। তারা আরও জানায়, যেসব কংগ্রেস সদস্য ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের অসম্মান করেছে, তাদের সাথে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নয় এই ব্যাংক।
ইউএস অফিস অব গভমেন্ট এথিকস হতে ২০১৯ সালে প্রকাশিত ট্রাম্পের আর্থিক বিবরণীর একটি নথি অনুযায়ী, সিগনেচার ব্যাংকে ট্রাম্পের একটি চেকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে। একটি প্রত্যাহারযোগ্য ট্রাস্টের আওতায় প্রেসিডেন্টের নামে ব্যাংকটিতে একটি মানি মার্কেট অ্যাকাউন্টও রয়েছে বলে জানা যায়।
অন্যান্য প্রধান ব্যাংকগুলোর সাথেও ট্রাম্পের যোগসূত্র রয়েছে বলে ওই নথি থেকে জানা যায়। ক্যাপিটাল ওয়ানে ট্রাম্পের ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি ৫০ লাখডলারের চেকিং ও সেভিংস একাউন্ট রয়েছে; জেপি মরগান চেজে আছে পাঁচ লাখ- ১০ লাখ ডলারের অ্যাকাউন্ট। ব্যাংক ইউনাইটেডে আড়াই লাখ ডলারের একাউন্ট রয়েছে জানিয়ে ট্রাম্পকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায় জেপি মরগান, এব্যাপারে কিছু জানায়নি ব্যাংক ইউনাইটেডও। ক্যাপিটাল ওয়ানের একজন মুখপাত্র জানান, তারা বর্তমান এবং প্রাক্তন গ্রাহকদের নিয়ে কোন মন্তব্য করেন না।
আর্থিক নথিতে প্রকাশিত বিবরণী অনুযায়ী, ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকে ট্রাম্পের পঞ্চাশ হাজার ডলার পর্যন্ত চেকিং একাউন্ট রয়েছে। যদিও ফার্স্ট রিপাবলিকের একজন মুখপাত্রের ভাষ্যমতে, ট্রাম্পের একক ব্যাংক একাউন্ট এখন আর সক্রিয় নেই।
ডয়েচে ব্যাংকের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কচ্ছেদ ট্রাম্পের জন্য বিরাট ক্ষতি। ডয়েচে ব্যাংকটির সাথে সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা জানান, সামনের বছরগুলোতে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনকে ব্যাংকের ৩৪০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। । তবে নতুন করে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ডয়েচে ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আর্থিক বিবরণীর নথি অনুযায়ী, ট্রাম্প এবং ডয়েচে ব্যাংকের মধ্যে বেশ কিছু লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ ফ্লোরিডাতে অবস্থিত গলফ রিসোর্ট ও ট্রাম্প ন্যাশনাল ডোরালের জন্য ট্রাম্প কোটি কোটি ডলার ঋণ নিয়েছেন। শিকাগোতে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল ও টাওয়ার এবং ২০১৬ সালে ওয়াশিংটনের ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল খোলার জন্য ঋণ দিয়েছিল ডয়েচে ব্যাংক।
করোনা মহামারীর কারণে হোটেল ব্যবসায় আগে থেকেই খরা চলছে। ফলে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পর ডয়েচে ব্যাংক কীভাবে এসব লেনদেন সামলাবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। ঋণের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে। গত মাসের শেষের দিকে এই ব্যাংকে ট্রাম্পের সবচেয়ে কাছের দুই কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ডয়েচে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ক্রিস্টিনা রিলে গত সপ্তাহে লিংকডইনের একটি পোস্টে ক্যাপিটল হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
“আমাদের সমাজে সহিংসতার কোন স্থান নেই। আমাদের যা দেখতে হলো তা পুরো জাতির জন্যই লজ্জার,”
“আমরা আমাদের সংবিধান নিয়ে গর্বিত । যারা এর মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতার হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক আমরা শুধু তাদের পাশেই থাকবো।” লিখেন ক্রিস্টিনা ।
ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস এবং নিউ ইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস যৌথভাবে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ব্যাপারে তদন্ত করছে। দুটি সংস্থাই ব্যাংকটিকে সংস্থাটির সাথে লেনদেনের সম্পর্ক জানাতে সমন জারি করেছে।
ট্রাম্প অর্গানাইজেশন কোনোভাবে সম্পত্তির মূল্য বর্ধিত করে ঋণদাতাদের কোনভাবে বিভ্রান্ত বা প্রতারণার চেষ্টা করেছে নাকি তা নিয়েই তদন্ত শুরু হয়েছে।
সূত্র: সিএনএন